নামাজে মনযোগ বৃদ্ধির ইমামি দাওয়া'ঈ
নামাজে মনযোগ নাই? বৃদ্ধির উপায় কি?এটা একটা কমন প্রশ্ন যে নামাজে মনযোগ নাই করনীয় কি? এ প্রশ্নটি আমার মনেও ছিল বহুদিন যাবৎ,এখন পর্যন্ত সমাধান হয়েছে ব্যপারটা এমন না তবে আমি কিছু উপায় পেয়েছি যার দ্বারা কিছুটা হলেও সংবরন করা সম্ভব।
★)সেমিনারে যাওয়ার পর যদি একজন ইংরেজী ভাষি বক্তা আর একজন বাংলা ভাষী বক্তা কথা বলেন তখন আমরা স্বভাবতই বাংলাভাষী বক্তার কথা একটু বেশী মনযোগ দিয়ে শুনি।
★)উচ্চস্বরে তিলওয়াত করা হয় এমন নামাজগুলোতে আমাদের নিরব থাকার বিধান রয়েছে কারণ ইমাম যখন কুরআন তেলওয়াত করেন তখন মুক্তাদির তিলওয়াতে নিষেধাঙ্গা রয়েছে। এক্ষেত্রে একটা ব্যপার আমার ক্ষেত্রে প্রায়ই হয়ে থাকে যে সুরা আল ফাহিতা পাঠকালে যে মনযোগটুকু থাকে তার খুব কম অংশই অবশিষ্ট থাকে যখন পরবর্তী অংশে আমার কাছে অপরিচিত কোন সুরা পাঠ করা হয়।
★) আমি যখন নিজে নিজে নামাজ আদায় করি তখন জামায়াতে আদায়ের চেয়ে অনেকগুন বেশী মনযোগী থাকি। এর একটা কারণ আমার কাছে মনে হয় তা হচ্ছে মস্তিস্কের নিস্ক্রিয়তা।আমাদের মস্তিস্ক আল্লাহ সুবহান ওয়া তাআলা এমন ভাবে তৈরী করেছেন যে তা কখনই মুক্ত থাকতে চায় না। আর সেজন্যই ঘুমের ব্যবস্থা, মানুষ শুধু ঘুমলেই তার মস্তিস্ক বিরতীতে যায় অন্যথায় সে অনবরত কাজ করতে থাকে। এ একটা কারনেই আমরা জামায়াতে নামাজ আদায় করার সময় যখন ভাল শ্রোতা হতে পারি না তখন আমাদের মন অন্য কাজে ব্যস্ত হয়ে পরে আর পুরনো কথা সামনে টেনে আনে।
★) আরও উদাহরণ টানতে গেলে জুম'আ পুর্ববর্তী খুৎবা ও আলোচনা পর্বের কথাও বলা যায়। আপনি একটু চেষ্টা করলেই খেয়াল করবেন যে যখন বাংলায় আলোচনা করা হয় তখন আপনার মন যতটা একাগ্র থাকে, আরবীতে খুৎবা পাঠকালে তার খুব স্বল্প পরিমানই অবশিষ্ট থাকে।
★) মানুষের আরও একটা স্বভাবজাত প্রবৃত্তি আছে এমন যে সে পরিচিত শব্দ বা বাক্যগুলো শুনলে তার সাথে সাথে নিজেও আওয়াজ করতে চায়। ঠিক যেমনটা আমরা গান শুনলে নিজেরাও তার সাথে সাথে গাই। কুরআন পাঠের ব্যপারটাও এমনই যে আমরা যখন পরিচিত সুরা শুনি তখন তা মনে মনে অনুকরন করার চেষ্টা করি এতে করে আমাদের মনোযোগ বৃদ্ধি পায় বহুগুনে।
উপরের ঘটনাগুলো শুধু আমার সাথে নয় বরং প্রায় সকলের ক্ষেত্রে হয়ে থাকে বিশেষ করে যারা আরবী বুঝে না বা সবগুলো সুরার সাথে পরিচিত নয় তাদের সকলের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। উপরের তথ্যগুলো থেকে এও বুঝা সহজ হয় যে আমাদের সামনে যদি পরিচিত কোন আওয়াজ করা হয় আমাদের মনযোগ একটু বেশী আকর্ষণ করতে পারে যতটা অপরিচিত শব্দের দ্বারা সম্ভব হয়না। সেজন্য নামাজে মনোযোগ আনার ক্ষেত্রে আমার মাথায় যে ধারনাটা জন্মেছে তা হল -ইমামরা যদি পরিচিত সুরাগুলোই পাঠ করেন নিয়মিত তবে একসাথে দুইটা উপকার পাবে ইমামের পেছনে থাকা মুসল্লিরা। এক- তারা পরিচিত সুরাগুলো নিজে পড়ার সময় যদি কোন ভুল করে থাকে তবে ইমামের সাথে সুদ্ধভাবে বির বির করতে করতে তা অনেকাংশেই কমে যাবে। দুই- পরিচিত সুরা হওয়াতে মুসল্লিরা বেশী মনযোগী হতে পারবে এবং নামাজ পরে আগের চেয়ে বহুলাংশে উচ্ছসিত হবে যা তাদেরকে পরবর্তীতে আরও নামাজ পরার জন্য উৎসাহিত করবে।
ধারনার উৎসঃ আমি এই রমজানে প্রথম কদিন কুরআন খতমের উদ্দেশ্যে তারাবীহ পরতাম তখন দেখলাম নামাজ পরে তেমন একটা মজা পাচ্ছি না। একদিকে অনেক সময় লেগে যাচ্ছে অন্যদিকে মনের ভিতরে নানান জল্পনা কল্পনার সৃষ্টি হওয়ায় মনযোগ দিতে পারিনা ভাল মত। তারপর চিন্তা করলাম হলের মসজিদে নামাজ পড়ব যেখানে সুররা তারাবীহ পড়ানো হয়। যেই ভাবা সেই কাজ - আমি অনেক বেশী মনযোগী হতে পেরেছি, নিজের সুরা পাঠে কিছু ভুল ছিল সেগুলোও সুধরে নিতে পেরেছি। আশা করছি আমার মত ভুল আপনারাও করবেন না বরং কুরআন খতমের উদ্দেশ্যেই মসজিদে গিয়ে তারাবীহ সালাত আদায় করার চেষ্টা করুন।
মোদ্দা কথা - পরিচিত সুরা পাঠ করে অল্প জানা মুসল্লিদের মনযোগ আকর্ষন করা যায় খুব সহজে।
sarthanweshi@gmail.com
নামাজে মনযোগ বৃদ্ধির ইমামি দাওয়া'ঈ
Reviewed by সার্থান্বেষী
on
সেপ্টেম্বর ২৪, ২০১৮
Rating:
কোন মন্তব্য নেই: