জোরপূর্বক বিবাহঃ আইন, কারণ, ফলাফল ও প্রতিকার
জোরপূর্বক বিবাহ হল কোন ব্যক্তিকে তার ইচ্ছার বা সম্মতির বিরুদ্ধে বিবাহ দেয়া। জোরপূর্বক বিবাহ আয়োজিত বিবাহ থেকে আলাদা, কারণ আয়োজিত বিবাহের ক্ষেত্রে ছেলে-মেয়ে উভয়েই তাদের পিতামাতা বা অন্য ব্যক্তি (যেমন ঘটক) কর্তৃক পছন্দকৃত পাত্রপাত্রীর সাথে বিবাহের ক্ষেত্রে সম্মতি প্রদান করে। জোরপূর্বক বিবাহের ক্ষেত্রে প্রায়ই জোর-জবরদস্তি, শারীরিক বা মানসিক নিগ্রহের মাধ্যমে, বিবাহ করতে বাধ্য করা হয়।প্রায় সময়ই দেখা যায় বিভিন্ন কারণে পাত্র বা পাত্রী বিয়ে করতে সম্মত না হলেও জোরপূর্বক বা তাদের সম্মতি ব্যতিরেকেই বিবাহের ব্যবস্থা করা হয়। এমন বিবাহও জোর পূর্বক বিবাহের অন্তর্ভুক্ত হবে। সারা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এবং সংস্কৃতিতে বিশেষ করে দক্ষিণ এশিয়া এবং আফ্রিকায় এখনো জোরপূর্বক বিবাহ প্রচলিত আছে। কিছু পণ্ডিতেরা "জোরপূর্বক বিবাহ" শব্দটি ব্যবহার করার বিপক্ষে। কারণ শব্দটির মাঝে সম্মতিজ্ঞাপক বৈধ বিবাহের শব্দসমূহ (যেমন স্বামী/স্ত্রী) জড়িত অথচ যার অভিজ্ঞতা সম্পূর্ণ বিপরীত। অবশ্য কিছু বিকল্প শব্দও আছে, যেমন, জোরপূর্বক দাম্পত্য সম্পর্ক এবং দাম্পত্য দাসত্ব।
জাতিসংঘ জোরপূর্বক বিবাহকে মানবাধিকারের লঙ্ঘন হিসেবে বিবেচনা করে। কারণ এটি ব্যক্তি স্বাধীনতা এবং ব্যক্তি স্বাতন্ত্র্যের পরিপন্থী। সার্বজনীন মানবাধিকার ঘোষণাপত্রে কোন নারী কর্তৃক তার জীবনসঙ্গী নির্বাচন ও স্বাধীনভাবে বিবাহ করার অধিকার তার জীবন ও আত্মসম্মানের ভিত্তি এবং মানুষ হিসেবে সমতার প্রকাশ হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। রোমান ক্যাথলিক চার্চ জোরপূর্বক বিবাহ রদ করা উচিত বলে মনে করে, কারণ বিবাহ তখনই বৈধ হয় যখন নারী-পুরুষ দুপক্ষই স্বাধীনভাবে তাদের সম্মতি প্রদান করে। দাসত্ব বিলোপের জন্য আহুত সম্পূরক সম্মেলনেও সেই বিবাহকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে যেখানে পিতামাতার, পরিবারের এবং অন্যান্যদের ইচ্ছার ব্যতিরেকে কোন মেয়ের তার নিজের বিয়ের ক্ষেত্রে না-বলার অধিকার নেই এবং এটা প্রতিরোধ করার জন্যই বিবাহের ক্ষেত্রে নুন্যতম বয়স নির্ধারণ করা দরকার।
সম্মতি ছাড়া বিয়ের ক্ষেত্রে আইন কি বলে?
একটি বিয়েতে সম্মতির গুরুত্ব কতটা? মুসলিম আইনে সম্মতি হচ্ছে আইনসম্মত বিয়ের পাঁচটি শর্তের অন্যতম শর্ত। যে ক্ষেত্রে স্ত্রী তার বিয়েতে সম্মতি দেয়, কেবলমাত্র সেই মুসলিম বিয়েই বৈধ। কোনো মেয়েকে তার অভিভাবক জোর করে বিয়ে প্রদান করলে সেই বিয়ে বৈধ হবে না। আমাদের সমাজে অনেক অভিভাবকই ১৮ বছরের আগে মেয়েকে বিয়ে দিয়ে দেন। এ ক্ষেত্রে কখনো কখনো মেয়ের সম্মতি নেয়া হয়, কখনো বা নেয়া হয় না। মেয়েকে ১৮ বছরের আগে অভিভাবক বা অন্য যে কারোর উদ্যোগে বিয়ে দেয়াটা আইনের চোখে শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এ ক্ষেত্রে মেয়ের সম্মতি নেয়া হয়েছে কি হয়নি, সেটি দেখা হবে না। এ ধরনের বিয়েকে বাল্য বিয়ে হিসেবে ধরা হয় যা আইনত দ-নীয় অপরাধ। ১৮ বছর পূর্ণ হলে মেয়েটি এ ধরনের বিয়ে আদালতে আবেদন করে অস্বীকার করতে পারেন।আবার অনেকসময় প্রাপ্তবয়স্ক মেয়েদেরও তাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধেবাবা মায়ের একান্ত ইচ্ছায় বিয়ের ব্যবস্থা করা হয় যা ইসলামী এবং রাষ্ট্রীয় আইনে মারাত্বক শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
মুসলিম বিবাহ বাতিল আইন, ১৯৩৯ এর ২ ধারা অনুসারে, কোনো নারীর ১৮ বছর পূর্ণ না হলে এবং তার সম্মতি ছাড়া বিয়ে হলে তিনি আইন অনুযায়ী আদালতে গিয়ে বিয়ে বাতিলের আবেদন করতে পারেন। তবে এ ক্ষেত্রে দুটি সীমাবদ্ধতা রয়েছে। প্রথমত, মেয়েটি যদি স্বামীর সঙ্গে দাম্পত্য সম্পর্ক স্থাপন না করে অর্থাৎ সহবাস না করে সে ক্ষেত্রেই বিয়ে বাতিলের আবেদন করা যাবে। দ্বিতীয়ত, মেয়েটির বয়স ১৮ বছর পূর্ণ হওয়ার পর এবং ১৯ বছর পার হওয়ার আগেই বিয়েকে অস্বীকার করতে হবে। এ ক্ষেত্রে কেউ যদি ১৯ বছরের পর আবেদন করে, তাহলে আদালত তার আবেদন বিবেচনা করবে না।
এ ঘটনায় দন্ড-বিধির ৩৬৬ ধারা অনুসারে ফৌজদারি অপরাধও করেছে। সুতরাং আদালতের আশ্রয় নিয়ে মেয়ে যদি অপরাধ প্রমাণ করতে পারে তাহলে অভিভাবক বা কথিত স্বামী নিশ্চয়ই শাস্তি পাবে। ১৮৬০ সালের দ-বিধির ৩৬৬ ধারা অনুসারে, যে ব্যক্তি কোনো নারীকে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে কোনো ব্যক্তিকে বিয়ে করতে বাধ্য করা যেতে পারে এরকম ইচ্ছায় বা তাকে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে কোনো ব্যক্তিকে বিয়ে করতে বাধ্য করার সম্ভাবনা রয়েছে জেনে কিংবা তাকে অবৈধ যৌন সহবাস করতে বাধ্য বা প্রলুব্ধ করার উদ্দেশে অথবা তাকে অবৈধ যৌন সহবাস করতে বাধ্য বা প্রলুব্ধ করার সম্ভাবনা রয়েছে জেনে অপহরণ বা হরণ করে সে ব্যক্তি সর্বোচ্চ ১০ বছর পর্যন্ত কারাদ- এবং অর্থদ-ে দন্ড-নীয় হবে এবং যে ব্যক্তি কোনো নারীকে এই বিধিতে বর্ণিত অপরাধমূলক ভীতিপ্রদর্শন বা ক্ষমতার অপব্যবহারের সাহায্যে বা বাধ্যবাধকতার অন্য কোনো উপায়ে অন্য কোনো ব্যক্তির সঙ্গে অবৈধ যৌন সহবাস করতে বাধ্য বা প্রলুব্ধ করা যেতে পারে এ উদ্দেশে অথবা তাকে অন্য কোনো ব্যক্তির সঙ্গে অবৈধ যৌন সহবাস করতে বাধ্য বা প্রলুব্ধ করা যেতে পারে জেনে তাকে কোনো স্থান থেকে গমন করতে প্রলুব্ধ করে সে ব্যক্তিও একই দন্ডে দন্ডিত হবে।
জোরপূর্বক বিবাহ কেন সংগঠিত হয়?
১) মেয়ের অনাগ্রহঃ জোরপূর্বক বিবাহ মানেই মেয়ের অনাগ্রহ।
দক্ষিণ এশিয়ার প্রায় সব দেশ বিশেষ করে বাংলাদেশে এখনও বিভিন্ন সময় জোরপূর্বক বিবাহ লক্ষ্য করা যায় যার ফলাফল খুব খারাপ ও ভয়াবহ। এখন প্রশ্ন আসতে পারে মেয়েরা কেন অনাগ্রহ প্রকাশ করে থাকে?? সম্প্রতি এক গবেষণায় দেখা গেছে যে, বেশীরভাগ মেয়েই তাদের নিজেদের শিক্ষা বা পারিপার্শ্বিক দিক থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে খুব দ্রুতই বিয়ে না করে বরং নিজের ক্যারিয়ার বা চিন্তা ভাবনাকে বিকশিত করার চিন্তা করে থাকে যার নিশ্চয়তা গনপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান এর তিন নাম্বার অংশের ( মৌলিক অধিকার) ৩৯ নাম্বার ধারায় স্পষ্ট করে বলা হয়েছে। পক্ষান্তরে মেয়ের পরিবার সেই সেকেলে চিন্তাভাবনা থেকে মেয়েদের দ্রুত বিয়ে না দিলে পরে কে বিয়ে করবে এমন চিন্তা থেকে দ্রুতই মেয়েদের বিয়ে দেয়ার চিন্তা করে যা এক এক করে দুটি পরিবার এবং বেশ কয়েকজন মানুষের আরামের ঘুম হারাম করতে যথেষ্ট। আবার উল্লেখিত কারণটি ছাড়াও আরও কিছু কারণ থাকতে পারে বলে মত দিচ্ছেন গবেষণা- নিচে সেগুলোও আলোচনা করা হল৷
২) মেয়ের নিজস্ব পছন্দঃ এই একটি কথা আমাদের সমাজে প্রচলিত সম্পর্ক হিসেবে৷ যখন কোন একটা মেয়ে আর ছেলে নিজেরা পরস্পরকে পছন্দ করে জীবন গড়তে বদ্ধপরিকর থাকে তখন এটা সম্পর্ক বলে বিবেচিত হয়। বর্তমান সময়ে যোগাযোগের বিস্তর সুযোগের কারণে এ ব্যপারটি ঘটে আসতেছে এটা অনেকটা স্বাভাবিক বলেই সবাই স্বীকার করে। কিন্তু একটা ব্যপার হয়ত অনেকেই ভাবেন না - যে আমরা শিশুকালে যে ভাষাটি শিখেছি তা হাজার বছর না বললেও ভুলব না বরং তা সবসময়ই ঐ শিশুটির মনে থাকবে। কোন একটা মানুষের কাছে তার সম্পর্ক বা ভালবাসাটা এমনই একটা ব্যপারে রূপ নেয় যে তা কোন সাবস্টিটিউটেই পূরণ করা সম্ভব হয়না বরং কোন মেয়ে বা ছেলে তার পছন্দ ভিন্ন অন্য কোন একটা অপরিচিত মানুষকে বিয়ে করবে আর অন্যদিকে তার মনে অন্য কিছু ঘুরতে থাকতে, দেখা দেয় নানান রকম অসামঞ্জস্যতা। ভবিষ্যৎ খুবই ভয়াবহ --- এমতাবস্থায় যদি কথিত স্ত্রী তার পুরনো প্রেমিকের সাথে যোগাযোগ রেখেই যায় তবে তাতে কি হতে পারে তা ভাবতেই অবাক লাগে।
এক্ষেত্রে আরও ভয়াবহ একটা ব্যাপার ঘটতে পারে যদি মেয়েটি তার কমিটেড মানুষটির সাথে বুঝে হোক বা না বুঝেই হোক শারীরিক সম্পর্কে জড়িয়ে পরে - এমনটা বর্তমানে হর হামেশাই ঘটছে। এমন অবস্হায় যদি তাকে জোর পূর্বক বিয়ে দেয়া হয় আর বাসর রাতে কথিত স্বামী তার সতিত্ব হারানোর নজির পেয়ে তার সাথে কি করবে ভেবে পাবে না আবার মান ইজ্বতের ভয়ে কিছু বলতেও পারবে না। কি হবে? দুটি পরিবার সারাজীবন এ জ্বালা বয়ে বেড়াবে -না পারবে বলতে না পারবে সইতে৷
৩) ছেলে পক্ষের অধিক সম্পত্তিঃ জোরপূর্বক বিবাহের ক্ষেত্রে এ কারনটাই সবচেয়ে বেশী দেখা যায় যে মেয়ের পরিবার ছেলে পক্ষের টাকা পয়সায় লোভ সামলাতে না পেরে যে কারও সাথেই মেয়ের বিয়ে দিতে উঠে পরে লাগে। এক্ষেত্রে অনেকসময় এতটা অমানবিক আচরণ করা হয় যে তারা মেয়েকে না জানিয়েই সব কাজ শেষ করে, মেয়ের সাথে ছেলের যোগাযোগের সুযোগ না দিয়ে সরাসরি বিয়ের পিড়িতে বসানের জন্য নিয়ে আসে৷ আমার দেখা কয়েকটা ঘটনার মধ্যে এমনও আছে যে ছেলেটি বিদেশি একটা সার কোম্পানির ভাল একটা পোস্টে চাকরি করে তা দেখে মেয়েটিকে কোন খবর না দিয়েই বিয়ের পিড়িতে বসিয়েছে - ফলাফলটা নিচের একটি কলামে বলব। আরও একটি ঘটনা এমন যে ছেলেটি একটি বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানে জব করে মোটামুটি ভালই টাকা আয় করে যা দেখে স্বল্প আয়ের বাবাটি চিন্তা করল আমার মেয়ের জন্য এর চেয়ে ভাল সম্বন্ধ আর হতে পারেনা সুতরাং মেয়েকে যেভাবেই হোক, জোর করে হোক মেরে হোক এখানেই বিয়ে দিতে হবে। কিন্তু তাদের টাকার প্রতি লোভের জন্য দুইটি পরিবারের সুখ নষ্ট হবে 😪
৪) ক্ষমতার দাপটঃ একটা সময় আমাদের দেশের এ কারণটি লক্ষ্য করা গেলেও আজকাল পত্রিকায় এমন খবর আর ছাপানো হয়না - সমাজে শিক্ষার আলো পৌছে আর মানুষের মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধির কারণে এমন ঘটনা এখন বিরল হয়ে যাচ্ছে - আশা করা যায় এমন ঘটনার আর প্রত্যাবর্তন হবে না৷
এর ফলাফল কি??
১) সংসারে অশান্তিঃ আগে উল্লেখিত সম্ভাবনাগুলোর যেকোন একটি যদি হয়ে থাকে তবেই সংসারে অশান্তি হতে যথেষ্ট। জোরপূর্বক বিয়ের ক্ষেত্রে মেয়েরা বা ছেলের অধিকাংশ সময়েই তাদের পুরনো ইতিহাস কোনভাবেই ভুলতে পারেনা -তখন একদিকে নব্য স্বামী-স্ত্রীর মাঝে বোঝাপরার মাত্রা চরম হতে থাকে। পরিবারে ধারাবাহিক অশান্তি লেগেই থাকে৷ আর যদি তিন নাম্বার কারনটি হয় তখনতো সব শেষ- বিয়ের রাতেই নব্য স্বামী তার নিজেকেই ক্ষমা করতে পারবেন না এই ভেবে যে আমি কেন না দেখে কাউকে ঘরে তুললাম??
২) পরকীয়াঃ বর্তমান সময়ের সবচেয়ে বড় সমস্যাগুলোর একটি হল- পরকীয়া। আগেই বলেছিলাম দুটো ঘটনা- প্রথম ঘটনার মেয়েটির যথাক্রমে দুটো বাচ্ছা থাকার পরেও সে এখন অন্যদের সাথে পরকীয়া করেই যাচ্ছে - এর কারণ হচ্ছে তাকে জোরপূর্বক যার সাথে বিয়ে দেয়া হল তাকে কোন রকম পছন্দই হল না৷
দ্বিতীয় মেয়েটির ঘটনাও একই- বিয়ের প্রথম বছরেই অনিচ্ছা সত্ত্বেও একটি মেয়ে হয় কিন্তু মনে শান্তি না থাকলে যা হয় তাই হল-- মেয়ের বয়স যখন তিন তখন সে অন্য একটা মানুষের সাথে অবৈধ সম্পর্ক গড়ে তুলে যা শেষ পর্যন্ত প্রথম স্বামীর সাথে বিবাহ বিচ্ছেদ হতে বাধ্য হয় --
৩) বিবাহ বিচ্ছেদঃ এ ঘটনাটি সচরাচর হয় না - কারণ আমাদের কাছে সমাজের গুরুত্বটা অনেক যার কারণে আমরা নিজেরভিতরে আগুন জ্বললেও বাহিরে প্রকাশ করতে চায় না, সামাজিক দিকটা ছাড়াও আরও একটা দিক আছে - মাত্রাতিরিক্ত কাবিনের টাকা যার কারণে অধিকাংশ সময়ই ছেলে পক্ষ বিবাহ বিচ্ছেদের দিকে যেতে চায় না - তখন দুপক্ষের মধ্যে সম্পর্কের তিক্ততা বাড়তে বাড়তে এমন পর্যায়ে পৌছায় যে তখন তাদের আর আত্বীয় নয় বরং শত্রুতে পরিণত হয়।
প্রতিকার কিভাবে পাব?
১) মেয়ের সাথে বাবা মায়ের বোঝাপড়াঃঃ একটা কথা প্রচলিত আছে এমন যে, বুঝলে নাকি লোহাও নরম হয়ে যায়। আপনি যদি বাবা মা হয়ে থাকেন তবে আপনার মেয়ে বা ছেলেকেই আগে ঠিক করুন তার পরই নাহয় অন্য কারো সাথে কথা বলুন। কিন্তু দুঃখের ব্যাপার হল- এই আধুনিক যুগে এসেও বাবা মা মেয়ে বা ছেলের সাথে ততটা খোলামেলা হতে পারে না যে সে কি করল না করল তা বাবা বা মায়ের কাছে বলবে - এর অবশ্য একটা কারণ থাকতে পারে - বাবা মায়েদের আগে থেকেই সব কাজে বাধা প্রদান, সবসময় নিজেদের মতের প্রাধান্য দান। মনে রাখবেন - ভাল কিছু কখনই জোর করে হয়না। বরং বাবা মায়ের উচিত সবার আগে তার মেয়ে বা ছেলের সাথে এটা আলাপ করা যে - সে কি এখন বিয়ের জন্যপ্রস্তুত কিনা - যেহেতু ইসলাম এবং দেশ কেউই জোরপূর্বক কোনকিছু সমর্থন করে না( বাংলাদেশ সংবিধানের ৩৪ অনুচ্ছেদ জোরপূর্বক কোন কাজ না করানোর নিশ্চয়তা দেয়)সুতরাং আপনি বা আপনারা এমন কিছু করলে নিজেরই যেন ক্ষতি করলেন। সুতরা কারও অনুমতি ছাড়া কারও উপর কিছু চাপানোর চেষ্টা করলে দেশীয় এবং ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে বিপদে পরতে পারেন।
এবার আসি - যদি আপনার সন্তান আপনার প্রস্তাবে রাজি না হয় তবে তাকে জোর না করে বুঝার চেষ্টা করুন কেন সে না বলছে। এক্ষেত্রে মনে রাখবেন - একটা কারণই সব নয়, আমাদের চারপাশের প্রতিটি ঘটনা রটনারই একাধিক কারণ থাকতে পারে - আপনার সন্তানকে বুঝুন, তাকে কাছে টেনে জানতে চেষ্টা করুন কেন সে আপনার কথা শুনছেনা।
২) মেয়ে-ছেলের সাথে বিবাহপূর্ব খোলামেলা আলাপঃ আজকাল এমন ব্যাপারটা প্রায় নিয়মই হয়ে গেছে যে বিয়ের আগে ছেলে মেয়ে নিজেদের মত বিনিময় করার সুযোগ পাবে৷ যদিও জোরপূর্বক বিবাহের ক্ষেত্রে এমন ঘটনা হয়না যার ফলেই উপরিউক্ত সমস্যাগুলো দেখা দেয়। কিন্তু - মেয়েপক্ষ নিজের স্বার্থ হাসিলের জন্য যাই করুক না কেন পরবর্তীতে শান্তিতে থাকতে হলে মূল কাজটি ছেলেকেই করতে হবে।
ছেলে যদি বিজ্ঞ হয় তবে তার জন্য এটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটা ব্যপার হবে যে মেয়ের সাথে সর্বোচ্চ খোলামেলা আলাপ করে তার ব্যাপারে সর্বোচ্চ পরিমান তথ্য নিতে হবে সাথে এ নিশ্চয়তা যে তাদের সাথে পরবর্তী সময়টা ভাল কাটবে - তবে মেয়ের মনের ভিতরকার কথা জানতে কিছু বাধা আছে যা বলে রাখা জরুরি -
ক) কোন স্পর্শকাতর তথ্য মেয়ে পক্ষের কাছে না জানানোর নিশ্চয়তা প্রদান।
খ) সর্বোচ্চ বন্ধুত্বপূর্ণ সমর্পক গড়ে তোলা।
গ)মেয়ের আচরণের প্রতিটা সুক্ষাতিসুক্ষ আচরন বিবেচনায় নেয়া।
আপনি যদি মেয়ের পরিবারকে না জানানোর নিশ্চয়তা না দেন তবে সে আপনাকে কখনই তার মনের কথা বলবে না৷ তখন কিন্তু আপনার নিজের বিপদ নিজেই ডেকে আনলেন -আবার অনেকসময় এমনও হতে পারে সে আপনাকে সরাসরি না বলে তার আচরণের মাধ্যমেও বুঝাতে পারে সেজন্য আপনি তার আচরণের প্রতিটা দিক সুক্ষাতিসুক্ষ ভাবে দেখবেন তবেই হয়ত কিছু থাকলে জেনে যাবেন৷
৩)) মেডিকেল টেস্টঃ এই পদ্ধতিটি আমাদের দেশে আজও প্রচলিত হয়নি যে আমরা চাইলেও এমনটি করতে পারি না৷ তবুও যদি আপনার আর তার পরিবারের মধ্যে বুঝা শুনার মধ্যে করতে পারেন তবেই সম্ভব হবে - এটাই সর্বোচ্চ নির্ভুল সমাধান আপনাকে দিতে পারবে।
৪)) মেয়ের পরিবারের আচরণ লক্ষ্য করুনঃ এটা প্রায়ই ঘটে যখন জোরপূর্বক বিবাহ হয়ে থাকে তখন মেয়ে পক্ষ চায় নিজের মেয়ের খারাপ দিকগুলো যাতে প্রকাশ না পায় সেজন্য তারা খুব গোপনীয়ভাবে সব কাজ সারতে চায় বা এটা খুব অল্প সময়ের মধ্যেই করার চেষ্টা করে -- ভবিষ্যতে সুখে থাকতে চোখ কান খোলা রাখুন, প্রতিটা ঘটনার ববিচার বিশ্লেষণ করুন, হুট করে সিদ্ধান্তে পৌছাবেন না।
তথ্যসূত্রঃ উইকিপিডিয়া,, সংবিধান,, আইন কানুন,,
জাতিসংঘ জোরপূর্বক বিবাহকে মানবাধিকারের লঙ্ঘন হিসেবে বিবেচনা করে। কারণ এটি ব্যক্তি স্বাধীনতা এবং ব্যক্তি স্বাতন্ত্র্যের পরিপন্থী। সার্বজনীন মানবাধিকার ঘোষণাপত্রে কোন নারী কর্তৃক তার জীবনসঙ্গী নির্বাচন ও স্বাধীনভাবে বিবাহ করার অধিকার তার জীবন ও আত্মসম্মানের ভিত্তি এবং মানুষ হিসেবে সমতার প্রকাশ হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। রোমান ক্যাথলিক চার্চ জোরপূর্বক বিবাহ রদ করা উচিত বলে মনে করে, কারণ বিবাহ তখনই বৈধ হয় যখন নারী-পুরুষ দুপক্ষই স্বাধীনভাবে তাদের সম্মতি প্রদান করে। দাসত্ব বিলোপের জন্য আহুত সম্পূরক সম্মেলনেও সেই বিবাহকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে যেখানে পিতামাতার, পরিবারের এবং অন্যান্যদের ইচ্ছার ব্যতিরেকে কোন মেয়ের তার নিজের বিয়ের ক্ষেত্রে না-বলার অধিকার নেই এবং এটা প্রতিরোধ করার জন্যই বিবাহের ক্ষেত্রে নুন্যতম বয়স নির্ধারণ করা দরকার।
সম্মতি ছাড়া বিয়ের ক্ষেত্রে আইন কি বলে?
একটি বিয়েতে সম্মতির গুরুত্ব কতটা? মুসলিম আইনে সম্মতি হচ্ছে আইনসম্মত বিয়ের পাঁচটি শর্তের অন্যতম শর্ত। যে ক্ষেত্রে স্ত্রী তার বিয়েতে সম্মতি দেয়, কেবলমাত্র সেই মুসলিম বিয়েই বৈধ। কোনো মেয়েকে তার অভিভাবক জোর করে বিয়ে প্রদান করলে সেই বিয়ে বৈধ হবে না। আমাদের সমাজে অনেক অভিভাবকই ১৮ বছরের আগে মেয়েকে বিয়ে দিয়ে দেন। এ ক্ষেত্রে কখনো কখনো মেয়ের সম্মতি নেয়া হয়, কখনো বা নেয়া হয় না। মেয়েকে ১৮ বছরের আগে অভিভাবক বা অন্য যে কারোর উদ্যোগে বিয়ে দেয়াটা আইনের চোখে শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এ ক্ষেত্রে মেয়ের সম্মতি নেয়া হয়েছে কি হয়নি, সেটি দেখা হবে না। এ ধরনের বিয়েকে বাল্য বিয়ে হিসেবে ধরা হয় যা আইনত দ-নীয় অপরাধ। ১৮ বছর পূর্ণ হলে মেয়েটি এ ধরনের বিয়ে আদালতে আবেদন করে অস্বীকার করতে পারেন।আবার অনেকসময় প্রাপ্তবয়স্ক মেয়েদেরও তাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধেবাবা মায়ের একান্ত ইচ্ছায় বিয়ের ব্যবস্থা করা হয় যা ইসলামী এবং রাষ্ট্রীয় আইনে মারাত্বক শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
মুসলিম বিবাহ বাতিল আইন, ১৯৩৯ এর ২ ধারা অনুসারে, কোনো নারীর ১৮ বছর পূর্ণ না হলে এবং তার সম্মতি ছাড়া বিয়ে হলে তিনি আইন অনুযায়ী আদালতে গিয়ে বিয়ে বাতিলের আবেদন করতে পারেন। তবে এ ক্ষেত্রে দুটি সীমাবদ্ধতা রয়েছে। প্রথমত, মেয়েটি যদি স্বামীর সঙ্গে দাম্পত্য সম্পর্ক স্থাপন না করে অর্থাৎ সহবাস না করে সে ক্ষেত্রেই বিয়ে বাতিলের আবেদন করা যাবে। দ্বিতীয়ত, মেয়েটির বয়স ১৮ বছর পূর্ণ হওয়ার পর এবং ১৯ বছর পার হওয়ার আগেই বিয়েকে অস্বীকার করতে হবে। এ ক্ষেত্রে কেউ যদি ১৯ বছরের পর আবেদন করে, তাহলে আদালত তার আবেদন বিবেচনা করবে না।
এ ঘটনায় দন্ড-বিধির ৩৬৬ ধারা অনুসারে ফৌজদারি অপরাধও করেছে। সুতরাং আদালতের আশ্রয় নিয়ে মেয়ে যদি অপরাধ প্রমাণ করতে পারে তাহলে অভিভাবক বা কথিত স্বামী নিশ্চয়ই শাস্তি পাবে। ১৮৬০ সালের দ-বিধির ৩৬৬ ধারা অনুসারে, যে ব্যক্তি কোনো নারীকে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে কোনো ব্যক্তিকে বিয়ে করতে বাধ্য করা যেতে পারে এরকম ইচ্ছায় বা তাকে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে কোনো ব্যক্তিকে বিয়ে করতে বাধ্য করার সম্ভাবনা রয়েছে জেনে কিংবা তাকে অবৈধ যৌন সহবাস করতে বাধ্য বা প্রলুব্ধ করার উদ্দেশে অথবা তাকে অবৈধ যৌন সহবাস করতে বাধ্য বা প্রলুব্ধ করার সম্ভাবনা রয়েছে জেনে অপহরণ বা হরণ করে সে ব্যক্তি সর্বোচ্চ ১০ বছর পর্যন্ত কারাদ- এবং অর্থদ-ে দন্ড-নীয় হবে এবং যে ব্যক্তি কোনো নারীকে এই বিধিতে বর্ণিত অপরাধমূলক ভীতিপ্রদর্শন বা ক্ষমতার অপব্যবহারের সাহায্যে বা বাধ্যবাধকতার অন্য কোনো উপায়ে অন্য কোনো ব্যক্তির সঙ্গে অবৈধ যৌন সহবাস করতে বাধ্য বা প্রলুব্ধ করা যেতে পারে এ উদ্দেশে অথবা তাকে অন্য কোনো ব্যক্তির সঙ্গে অবৈধ যৌন সহবাস করতে বাধ্য বা প্রলুব্ধ করা যেতে পারে জেনে তাকে কোনো স্থান থেকে গমন করতে প্রলুব্ধ করে সে ব্যক্তিও একই দন্ডে দন্ডিত হবে।
জোরপূর্বক বিবাহ কেন সংগঠিত হয়?
১) মেয়ের অনাগ্রহঃ জোরপূর্বক বিবাহ মানেই মেয়ের অনাগ্রহ।
দক্ষিণ এশিয়ার প্রায় সব দেশ বিশেষ করে বাংলাদেশে এখনও বিভিন্ন সময় জোরপূর্বক বিবাহ লক্ষ্য করা যায় যার ফলাফল খুব খারাপ ও ভয়াবহ। এখন প্রশ্ন আসতে পারে মেয়েরা কেন অনাগ্রহ প্রকাশ করে থাকে?? সম্প্রতি এক গবেষণায় দেখা গেছে যে, বেশীরভাগ মেয়েই তাদের নিজেদের শিক্ষা বা পারিপার্শ্বিক দিক থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে খুব দ্রুতই বিয়ে না করে বরং নিজের ক্যারিয়ার বা চিন্তা ভাবনাকে বিকশিত করার চিন্তা করে থাকে যার নিশ্চয়তা গনপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান এর তিন নাম্বার অংশের ( মৌলিক অধিকার) ৩৯ নাম্বার ধারায় স্পষ্ট করে বলা হয়েছে। পক্ষান্তরে মেয়ের পরিবার সেই সেকেলে চিন্তাভাবনা থেকে মেয়েদের দ্রুত বিয়ে না দিলে পরে কে বিয়ে করবে এমন চিন্তা থেকে দ্রুতই মেয়েদের বিয়ে দেয়ার চিন্তা করে যা এক এক করে দুটি পরিবার এবং বেশ কয়েকজন মানুষের আরামের ঘুম হারাম করতে যথেষ্ট। আবার উল্লেখিত কারণটি ছাড়াও আরও কিছু কারণ থাকতে পারে বলে মত দিচ্ছেন গবেষণা- নিচে সেগুলোও আলোচনা করা হল৷
২) মেয়ের নিজস্ব পছন্দঃ এই একটি কথা আমাদের সমাজে প্রচলিত সম্পর্ক হিসেবে৷ যখন কোন একটা মেয়ে আর ছেলে নিজেরা পরস্পরকে পছন্দ করে জীবন গড়তে বদ্ধপরিকর থাকে তখন এটা সম্পর্ক বলে বিবেচিত হয়। বর্তমান সময়ে যোগাযোগের বিস্তর সুযোগের কারণে এ ব্যপারটি ঘটে আসতেছে এটা অনেকটা স্বাভাবিক বলেই সবাই স্বীকার করে। কিন্তু একটা ব্যপার হয়ত অনেকেই ভাবেন না - যে আমরা শিশুকালে যে ভাষাটি শিখেছি তা হাজার বছর না বললেও ভুলব না বরং তা সবসময়ই ঐ শিশুটির মনে থাকবে। কোন একটা মানুষের কাছে তার সম্পর্ক বা ভালবাসাটা এমনই একটা ব্যপারে রূপ নেয় যে তা কোন সাবস্টিটিউটেই পূরণ করা সম্ভব হয়না বরং কোন মেয়ে বা ছেলে তার পছন্দ ভিন্ন অন্য কোন একটা অপরিচিত মানুষকে বিয়ে করবে আর অন্যদিকে তার মনে অন্য কিছু ঘুরতে থাকতে, দেখা দেয় নানান রকম অসামঞ্জস্যতা। ভবিষ্যৎ খুবই ভয়াবহ --- এমতাবস্থায় যদি কথিত স্ত্রী তার পুরনো প্রেমিকের সাথে যোগাযোগ রেখেই যায় তবে তাতে কি হতে পারে তা ভাবতেই অবাক লাগে।
এক্ষেত্রে আরও ভয়াবহ একটা ব্যাপার ঘটতে পারে যদি মেয়েটি তার কমিটেড মানুষটির সাথে বুঝে হোক বা না বুঝেই হোক শারীরিক সম্পর্কে জড়িয়ে পরে - এমনটা বর্তমানে হর হামেশাই ঘটছে। এমন অবস্হায় যদি তাকে জোর পূর্বক বিয়ে দেয়া হয় আর বাসর রাতে কথিত স্বামী তার সতিত্ব হারানোর নজির পেয়ে তার সাথে কি করবে ভেবে পাবে না আবার মান ইজ্বতের ভয়ে কিছু বলতেও পারবে না। কি হবে? দুটি পরিবার সারাজীবন এ জ্বালা বয়ে বেড়াবে -না পারবে বলতে না পারবে সইতে৷
৩) ছেলে পক্ষের অধিক সম্পত্তিঃ জোরপূর্বক বিবাহের ক্ষেত্রে এ কারনটাই সবচেয়ে বেশী দেখা যায় যে মেয়ের পরিবার ছেলে পক্ষের টাকা পয়সায় লোভ সামলাতে না পেরে যে কারও সাথেই মেয়ের বিয়ে দিতে উঠে পরে লাগে। এক্ষেত্রে অনেকসময় এতটা অমানবিক আচরণ করা হয় যে তারা মেয়েকে না জানিয়েই সব কাজ শেষ করে, মেয়ের সাথে ছেলের যোগাযোগের সুযোগ না দিয়ে সরাসরি বিয়ের পিড়িতে বসানের জন্য নিয়ে আসে৷ আমার দেখা কয়েকটা ঘটনার মধ্যে এমনও আছে যে ছেলেটি বিদেশি একটা সার কোম্পানির ভাল একটা পোস্টে চাকরি করে তা দেখে মেয়েটিকে কোন খবর না দিয়েই বিয়ের পিড়িতে বসিয়েছে - ফলাফলটা নিচের একটি কলামে বলব। আরও একটি ঘটনা এমন যে ছেলেটি একটি বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানে জব করে মোটামুটি ভালই টাকা আয় করে যা দেখে স্বল্প আয়ের বাবাটি চিন্তা করল আমার মেয়ের জন্য এর চেয়ে ভাল সম্বন্ধ আর হতে পারেনা সুতরাং মেয়েকে যেভাবেই হোক, জোর করে হোক মেরে হোক এখানেই বিয়ে দিতে হবে। কিন্তু তাদের টাকার প্রতি লোভের জন্য দুইটি পরিবারের সুখ নষ্ট হবে 😪
৪) ক্ষমতার দাপটঃ একটা সময় আমাদের দেশের এ কারণটি লক্ষ্য করা গেলেও আজকাল পত্রিকায় এমন খবর আর ছাপানো হয়না - সমাজে শিক্ষার আলো পৌছে আর মানুষের মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধির কারণে এমন ঘটনা এখন বিরল হয়ে যাচ্ছে - আশা করা যায় এমন ঘটনার আর প্রত্যাবর্তন হবে না৷
এর ফলাফল কি??
১) সংসারে অশান্তিঃ আগে উল্লেখিত সম্ভাবনাগুলোর যেকোন একটি যদি হয়ে থাকে তবেই সংসারে অশান্তি হতে যথেষ্ট। জোরপূর্বক বিয়ের ক্ষেত্রে মেয়েরা বা ছেলের অধিকাংশ সময়েই তাদের পুরনো ইতিহাস কোনভাবেই ভুলতে পারেনা -তখন একদিকে নব্য স্বামী-স্ত্রীর মাঝে বোঝাপরার মাত্রা চরম হতে থাকে। পরিবারে ধারাবাহিক অশান্তি লেগেই থাকে৷ আর যদি তিন নাম্বার কারনটি হয় তখনতো সব শেষ- বিয়ের রাতেই নব্য স্বামী তার নিজেকেই ক্ষমা করতে পারবেন না এই ভেবে যে আমি কেন না দেখে কাউকে ঘরে তুললাম??
২) পরকীয়াঃ বর্তমান সময়ের সবচেয়ে বড় সমস্যাগুলোর একটি হল- পরকীয়া। আগেই বলেছিলাম দুটো ঘটনা- প্রথম ঘটনার মেয়েটির যথাক্রমে দুটো বাচ্ছা থাকার পরেও সে এখন অন্যদের সাথে পরকীয়া করেই যাচ্ছে - এর কারণ হচ্ছে তাকে জোরপূর্বক যার সাথে বিয়ে দেয়া হল তাকে কোন রকম পছন্দই হল না৷
দ্বিতীয় মেয়েটির ঘটনাও একই- বিয়ের প্রথম বছরেই অনিচ্ছা সত্ত্বেও একটি মেয়ে হয় কিন্তু মনে শান্তি না থাকলে যা হয় তাই হল-- মেয়ের বয়স যখন তিন তখন সে অন্য একটা মানুষের সাথে অবৈধ সম্পর্ক গড়ে তুলে যা শেষ পর্যন্ত প্রথম স্বামীর সাথে বিবাহ বিচ্ছেদ হতে বাধ্য হয় --
৩) বিবাহ বিচ্ছেদঃ এ ঘটনাটি সচরাচর হয় না - কারণ আমাদের কাছে সমাজের গুরুত্বটা অনেক যার কারণে আমরা নিজেরভিতরে আগুন জ্বললেও বাহিরে প্রকাশ করতে চায় না, সামাজিক দিকটা ছাড়াও আরও একটা দিক আছে - মাত্রাতিরিক্ত কাবিনের টাকা যার কারণে অধিকাংশ সময়ই ছেলে পক্ষ বিবাহ বিচ্ছেদের দিকে যেতে চায় না - তখন দুপক্ষের মধ্যে সম্পর্কের তিক্ততা বাড়তে বাড়তে এমন পর্যায়ে পৌছায় যে তখন তাদের আর আত্বীয় নয় বরং শত্রুতে পরিণত হয়।
প্রতিকার কিভাবে পাব?
১) মেয়ের সাথে বাবা মায়ের বোঝাপড়াঃঃ একটা কথা প্রচলিত আছে এমন যে, বুঝলে নাকি লোহাও নরম হয়ে যায়। আপনি যদি বাবা মা হয়ে থাকেন তবে আপনার মেয়ে বা ছেলেকেই আগে ঠিক করুন তার পরই নাহয় অন্য কারো সাথে কথা বলুন। কিন্তু দুঃখের ব্যাপার হল- এই আধুনিক যুগে এসেও বাবা মা মেয়ে বা ছেলের সাথে ততটা খোলামেলা হতে পারে না যে সে কি করল না করল তা বাবা বা মায়ের কাছে বলবে - এর অবশ্য একটা কারণ থাকতে পারে - বাবা মায়েদের আগে থেকেই সব কাজে বাধা প্রদান, সবসময় নিজেদের মতের প্রাধান্য দান। মনে রাখবেন - ভাল কিছু কখনই জোর করে হয়না। বরং বাবা মায়ের উচিত সবার আগে তার মেয়ে বা ছেলের সাথে এটা আলাপ করা যে - সে কি এখন বিয়ের জন্যপ্রস্তুত কিনা - যেহেতু ইসলাম এবং দেশ কেউই জোরপূর্বক কোনকিছু সমর্থন করে না( বাংলাদেশ সংবিধানের ৩৪ অনুচ্ছেদ জোরপূর্বক কোন কাজ না করানোর নিশ্চয়তা দেয়)সুতরাং আপনি বা আপনারা এমন কিছু করলে নিজেরই যেন ক্ষতি করলেন। সুতরা কারও অনুমতি ছাড়া কারও উপর কিছু চাপানোর চেষ্টা করলে দেশীয় এবং ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে বিপদে পরতে পারেন।
এবার আসি - যদি আপনার সন্তান আপনার প্রস্তাবে রাজি না হয় তবে তাকে জোর না করে বুঝার চেষ্টা করুন কেন সে না বলছে। এক্ষেত্রে মনে রাখবেন - একটা কারণই সব নয়, আমাদের চারপাশের প্রতিটি ঘটনা রটনারই একাধিক কারণ থাকতে পারে - আপনার সন্তানকে বুঝুন, তাকে কাছে টেনে জানতে চেষ্টা করুন কেন সে আপনার কথা শুনছেনা।
২) মেয়ে-ছেলের সাথে বিবাহপূর্ব খোলামেলা আলাপঃ আজকাল এমন ব্যাপারটা প্রায় নিয়মই হয়ে গেছে যে বিয়ের আগে ছেলে মেয়ে নিজেদের মত বিনিময় করার সুযোগ পাবে৷ যদিও জোরপূর্বক বিবাহের ক্ষেত্রে এমন ঘটনা হয়না যার ফলেই উপরিউক্ত সমস্যাগুলো দেখা দেয়। কিন্তু - মেয়েপক্ষ নিজের স্বার্থ হাসিলের জন্য যাই করুক না কেন পরবর্তীতে শান্তিতে থাকতে হলে মূল কাজটি ছেলেকেই করতে হবে।
ছেলে যদি বিজ্ঞ হয় তবে তার জন্য এটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটা ব্যপার হবে যে মেয়ের সাথে সর্বোচ্চ খোলামেলা আলাপ করে তার ব্যাপারে সর্বোচ্চ পরিমান তথ্য নিতে হবে সাথে এ নিশ্চয়তা যে তাদের সাথে পরবর্তী সময়টা ভাল কাটবে - তবে মেয়ের মনের ভিতরকার কথা জানতে কিছু বাধা আছে যা বলে রাখা জরুরি -
ক) কোন স্পর্শকাতর তথ্য মেয়ে পক্ষের কাছে না জানানোর নিশ্চয়তা প্রদান।
খ) সর্বোচ্চ বন্ধুত্বপূর্ণ সমর্পক গড়ে তোলা।
গ)মেয়ের আচরণের প্রতিটা সুক্ষাতিসুক্ষ আচরন বিবেচনায় নেয়া।
আপনি যদি মেয়ের পরিবারকে না জানানোর নিশ্চয়তা না দেন তবে সে আপনাকে কখনই তার মনের কথা বলবে না৷ তখন কিন্তু আপনার নিজের বিপদ নিজেই ডেকে আনলেন -আবার অনেকসময় এমনও হতে পারে সে আপনাকে সরাসরি না বলে তার আচরণের মাধ্যমেও বুঝাতে পারে সেজন্য আপনি তার আচরণের প্রতিটা দিক সুক্ষাতিসুক্ষ ভাবে দেখবেন তবেই হয়ত কিছু থাকলে জেনে যাবেন৷
৩)) মেডিকেল টেস্টঃ এই পদ্ধতিটি আমাদের দেশে আজও প্রচলিত হয়নি যে আমরা চাইলেও এমনটি করতে পারি না৷ তবুও যদি আপনার আর তার পরিবারের মধ্যে বুঝা শুনার মধ্যে করতে পারেন তবেই সম্ভব হবে - এটাই সর্বোচ্চ নির্ভুল সমাধান আপনাকে দিতে পারবে।
৪)) মেয়ের পরিবারের আচরণ লক্ষ্য করুনঃ এটা প্রায়ই ঘটে যখন জোরপূর্বক বিবাহ হয়ে থাকে তখন মেয়ে পক্ষ চায় নিজের মেয়ের খারাপ দিকগুলো যাতে প্রকাশ না পায় সেজন্য তারা খুব গোপনীয়ভাবে সব কাজ সারতে চায় বা এটা খুব অল্প সময়ের মধ্যেই করার চেষ্টা করে -- ভবিষ্যতে সুখে থাকতে চোখ কান খোলা রাখুন, প্রতিটা ঘটনার ববিচার বিশ্লেষণ করুন, হুট করে সিদ্ধান্তে পৌছাবেন না।
তথ্যসূত্রঃ উইকিপিডিয়া,, সংবিধান,, আইন কানুন,,
জোরপূর্বক বিবাহঃ আইন, কারণ, ফলাফল ও প্রতিকার
Reviewed by সার্থান্বেষী
on
নভেম্বর ২৫, ২০১৯
Rating:
কোন মন্তব্য নেই: