সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার বিধি- একটি ইসলামি আইনের প্রয়োগ

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপন হওয়ার পর থেকে কতজন কতভাবে এ আইনটির বিরোধিতাকরে যাচ্ছিল - সেই থেকে চিন্তা করা এমন একটি লেখনির, ভূলত্রুটি ধরিয়ে দিবেন।   

"পশ্চাতে ও সম্মুখে পরনিন্দাকারীর জন্য দূর্ভোগ "- [সূরা-হুমাযাহ-০১]

উপর্যুক্ত আয়াতটি এ জন্য যে অন্যের ব্যপারে ফেসবুকে বা অনলাইনে অন্য কোন মাধ্যমে অথবা অফলাইনেও যদি কারও ব্যপারে মন্দ কথা রটানে হয় যদিও তা সে করেছে তবুও তার জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে লানত।

আমি সজ্ঞানে এ আইনটির পক্ষ নিচ্ছি এ কারণে যে এ  আইনটি   বিশ্বাসীদের জন্য ফরজ করা হয়েছিল ইসলাম প্রাক্কাল থেকেই অথচ আমরা বেমালুম ভূলে যাচ্ছি সেই নিষেধাজ্ঞার কথা।

আমি বলছিলাম গীবতের ব্যাপারে কুরআন হাদিসের স্পষ্ট নিষেধাজ্ঞার কথা - এখন প্রশ্ন আসতে পারে এটা কি তবে গীবত হবে?  আমরা তো সমালোচনা করছি সংশোধনের জন্য। এটা গীবত কিনা সেটা প্রমান করার জন্য একটি হাদিস পেশ করা দোষের হবে না বলেই মনে করছি -

গীবত-এর সংজ্ঞা: ‘গীবত’ অর্থ বিনা প্রয়োজনে কোন ব্যক্তির দোষ অপরের নিকটে উল্লেখ করা। ইবনুল আছীর বলেনঃ “গীবত হল কোন মানুষের এমন কিছু বিষয় যা তার অনুপস্থিতিতে উল্লেখ করা, যা সে অপছন্দ করে, যদিও তা তার মধ্যে বিদ্যমান থাকে”। এসব সংজ্ঞা মূলত হাদিস হতে নেয়া হয়েছে। রাসূলুল্লাহ্‌ (সা:) গীবতের পরিচয় দিয়ে বলেনঃ “গীবত হল তোমার ভাইয়ের এমন আচরণ বর্ণনা করা, যা সে খারাপ জানে।” [1]

এখন তো বিষয়টা স্পষ্ট যে আমরা হুট করে ফেসবুকে অমুক মন্ত্রী তমুক মন্ত্রীর নামে একখান কথা ছড়ায় দিলাম আর তা আমার আপনার সকল ভাল কাজগুলো ধ্বংস করার জন্য যথেষ্ট হয়ে গেল।

আমাদের এরূপ কর্মকান্ড যদি গীবত বলে সাব্যস্ত করা যায় তবে গীবতের ফলাফল কি হতে পারে তা নিয়েই বরং বলা যাক - আমরা হাদিসের আলোচনা থেকে জানতে পারি নবী (সাঃ) তার প্রিয় সহধর্মিণীদের এবং তার খলিফাদেরও এর কুফল সম্পর্কে সচেতন করতে গিয়ে কড়া কথা শুনিয়েছেন এই বলে যে তোমরা নিশ্চয়ই তোমাদের মৃত ভাইয়ের গোশত খেতে চাওনা।

আনাস ইবন মালেক (রা:) বলেনঃ আরবরা সফরে বের হলে একে অপরের খেদমত করত। আবু বকর ও ওমর (রা:)-এর সাথে একজন খাদেম ছিল। (একবার সফর অবস্থায়) ঘুম থেকে তারা উভয়ে জাগ্রত হয়ে দেখেন যে, তাদের খাদেম তাদের জন্য খানা প্রস্তুত করেনি, তখন তারা পরস্পরকে বললেন, দেখ এই ব্যক্তিটি বাড়ির ঘুমের ন্যায় ঘুমাচ্ছে (অর্থাৎ এমনভাবে নিদ্রায় বিভোর যে, মনে হচ্ছে সে বাড়িতেই রয়েছে, সফরে নয়)। অতঃপর তারা তাকে জাগিয়ে দিয়ে বললেনঃ রাসূলুল্লাহ্‌ (সা:)-এর কাছে যাও এবং বল আবু বকর ও ওমর আপনাকে সালাম দিয়েছেন এবং আপনার কাছে তরকারী চেয়ে পাঠিয়েছেন (নাস্তা খাওয়ার জন্য)। লোকটি রাসূলুল্লাহ (সা:)-এর নিকটে গেলে তিনি [রাসূলুল্লাহ্‌ (সা)] বললেনঃ তারাতো তরকারী খেয়েছে, তখন তারা বিস্মিত হলেন এবং নাবী কারীম (সা:)-এর নিকটে এসে বললেনঃ হে আল্লাহ্‌র রাসূল (সা:)! আমরা আপনার নিকটে এসে লোক পাঠালাম তরকারী তলব করে, অথচ আপনি বলেছেন, আমরা তরকারী খেয়েছি? তখন নাবী কারীম (সা:) বললেনঃ তোমরা তোমাদের ভাইয়ের (খাদেমের) গোশত খেয়েছ। কসম ঐ সত্তার! যার হাতে আমার প্রাণ, নিশ্চয়ই আমি ঐ খাদেমটির গোশত তোমাদের সামনের দাঁতের ফাঁক দিয়ে দেখতে পাচ্ছি। তারা বললেনঃ [ইয়া রাসূলুল্লাহ্‌ (সা:)] আপনি আমাদের জন্য ক্ষমা তলব করুন। আলবানী হাদিসটিকে সহিহ্‌ বলেছেন। [2]

সেসব তাত্ত্বিক আর ধর্মীয় কথা বার্তা বেশ সেকেলে মনে হচ্ছে, তো এবার বলুন তো কোন মানুষের বিপক্ষে আপনি প্রতিদিন খেয়ে না খেয়ে পোস্টের পর পোস্ট করে যাচ্ছেন তাতে আপনার পেটে ক বেলা ভাত এসেছে আর কতজনই বা খারাপ কাজ থেকে দূরে সরে এসেছে??

সোলায়মান শুখন, এ যুগের একজন ফেসবুক সেলিব্রেটি, এর একটা কথা আমার মনে ধরেছে - সে অতিসম্প্রতি তার একটা লাইভে এসে ব্যাখা দিল কেন সে মানুষের খারাপ নিয়ে কথা বলে না। তার যুক্তি হল- মানুষের খারাপ নিয়ে যখন আমরা কথা বলি তখন তার ভিতরটা অতটা পরিবর্তন হয় না বরং তার সামনে যদি আমরা অন্যের ভাল দিকগুলো তুলে ধরতে পারি তবেই সে আরও বেশি ভাল কাজ করতে অনুপ্রাণিত হবে৷[৩]

অনেকেই এখন প্রশ্ন করবেন, কতজন আছে এদেশে যে অন্যজন ভাল করতেছে তাই আমিও করব! - উত্তরে শুখন ভাই বলেছে -হে আছে৷ আমি তার প্রমান দিতে পারব।

আমি আমার মত করে ব্যাখা দিচ্ছি - "বিদ্যানন্দ" বা "অভিযাত্রিক ফাউন্ডেশন" বা এমন আরও অনেক সেচ্ছাসেবী সংগঠনের নাম  বর্তমানে জানে না এমন মানুষ পাওয়া দুস্কর। এ প্রতিষ্ঠানগুলো যখন যাত্রা শুরু করে তখন এদেশে মানবতার পক্ষে সংগঠন ছিল হাতে গোনা অল্প কয়েকটা কিন্তু বর্তমানে একটু চোখ বুলালেই আপনার চারপাশে শত শত সেচ্ছাসেবী সংগঠন দেখতে পাবেন৷ আমি বলব- এটা শুধুমাত্র মানুষের সত্যের পক্ষে চলার শক্তি, মানুষ যে এখনও ভাল কে গ্রহন করে তারই প্রমান৷

এসব তো মানলাম, আমরা যদি ভূলের বিপক্ষে না বলি তবে ভূল কেমন করে শুধরাবে?
- এ প্রশ্নটা আসতেই পারে।

আসুন একটা উদাহরন টানি - সর্বশেষ উসমানীয় খলিফার সময়কালে বিশ্বে ইসলামের যে দাপট ছিল সেটা এখন নাই - অদূর ভবিষ্যতে হবে বলেও মনে হয় না৷ এর একমাত্র কারণ আমাদের অদূরদর্শী মনভাব আর জ্ঞানার্জনে অনীহা। ধরুন আমেরিকা বা ইসরাইল আমাদের( মুসলমানের)  প্রত্যক্ষ ক্ষতি করে যাচ্ছে নিয়মিত কিন্তু আমরা কিছু বলতে পারছি না কেবল তাদেরই তৈরি করা ফেসবুকে গালি দিয়ে ভরাচ্ছি৷ আচ্ছা এতে কি কোন লাভ হচ্ছে?  উত্তর নিশ্চয়ই না আসবে। তাহলে কি করতে হবে?
- আমরা আন্দোলন করেও তাদের কাছে পৌছতে পারব না কারণ তাদের অত্যাধুনিক মরনাস্ত্র আমাদের শেষ করে দেয়ার জন্য যথেষ্ট কিন্তু তাদের ধন্যবাদ এ জন্য যে তারা করুনা করে আমাদের একেবারে শেষ করে দিচ্ছে না৷ ইসলামের শক্তিগুলোর মধ্যে তারা ভয় পায় এমন একমাত্র শক্তি হচ্ছে ইরান আর তুরস্ক। কেন তাদের ভয় পায়? কারণ তারা তাদের সাথে টক্কর দেয়ার সেই ক্ষমতা রাখে -তাই।

এবার নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছেন এদেশের খারাপ মানুষদের সায়েস্তা করতে হলে ভাল মানুষদেরকে ঐ জায়গাগুলো দখল নিতে হবে তবেই না ভাল মানুষ নেতৃত্ব দিবে। সব এমপিরা যখন ধান কাটতে গিয়ে কৃষকের ক্ষতি করতে ব্যস্ত তখন একজন শিক্ষিত এমপি নিজে ধান না কেটে খোজ নিয়েছেন কোনদেশ থেকে একটা ধান কাটার মেশিন আনা যায় - এভাবে যদি এক এক করে এমপি থেকে শুরু করে ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পর্যন্ত ভাল মানুষ নেতৃত্ব দিতে থাকে তবেই না এদেশ শান্তি পাবে, হবে সত্যিকারের সোনার বাংলা।

তাই বলছিলাম আসুন, অন্যের দোষ নিয়ে ফেসবুকে না লিখে বরং নিজেকে যোগ্য করে তুলে সে জায়গাটাকে কিভাবে ভালভাবে চালানো যায় সে চিন্তা করি।

 [1] মুসলিম #১৮০৩
[2] দ্রষ্টব্য আমাসিক আলায়কা লিসানাকা (কুয়েত ১ম সংস্করণ ১৯৯৭ইং)
[3] shorturl.at/jy126

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার বিধি- একটি ইসলামি আইনের প্রয়োগ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার বিধি- একটি ইসলামি আইনের প্রয়োগ Reviewed by সার্থান্বেষী on মে ০৮, ২০২০ Rating: 5

কোন মন্তব্য নেই:

Copyright 2020, All Rights Reserved by Blog Sarthanweshi

Blogger দ্বারা পরিচালিত.