মেহরাব নয়নের রহস্য গল্প -" ইন্দ্রিয় লালসা-২"
ইন্দ্রিয় লালসা-- পার্ট- ২
.
অনেকগুলো প্রশ্ন এখন মাথার ভিতর নাড়াচাড়া করছে।
"২জন নারীকেই খুন করলো কেনো?
"একিই রুমে রাজু থাকা সত্বেও রাজুকে খুন করলোনা কেনো"?
"আরিফ সাহেব এসে মেয়ের এই অবস্থা দেখেও হসপিটালে থাকলেন না কেনো"?
" আরিফ সাহেব কি খুনটা করেছেন?
না'কি রাজুর কোনো শত্রু? না'কি অন্যকেউ?
সবচাইতে বড় যে প্রশ্ন,
"কেউ খুন করে লাশের সাথে শারীরিক সম্পর্কে করবে কেনো"?
উত্তর'গুলো আমাকে খুঁজে বের করতেই হবে। আর আমি নিশ্চিত, প্রতিটা প্রশ্নের উত্তর ওই হসপিটালেই পড়ে আছে।
.
থানা থেকে বের হয়ে কন্সটেবল আসিফকে কল দিলাম। ধরলো।
আমি বললাম,
–আসিফ যেভাবেই হোক ফরেনসিক এবং পোস্টমর্টেম রিপোর্ট'টা আমি তাড়াতাড়ি চাই। আর তুমি মায়া হকের স্বামী আরিফ সাহেব সম্পর্কে একটু খোঁজ নাও। আমার মনে হচ্ছে উনার সাথে এই খুনটার ভীষণ গভীর সম্পর্ক।
–ঠিক আছে স্যার। আমি খোঁজ নিচ্ছি"।
আসিফের সাথে কথা শেষ করে রওনা দিলাম। উদ্দেশ্য ওসমানীনগর হসপিটাল।
.
.
হসপিটালে পৌছে ডাক্তার শামীমকে বললাম,
–আপনাদের তো পুরো হসপিটালে সিসিটিভি লাগানো আছে তাইনা? আমি কি ওইরাতের ফুটেজ'গুলো দেখতে পারি"?
–জ্বী স্যার অবশ্যই। আমার সাথে আসুন"।
.
ডাক্তার শামীমের পিছন পিছন একটা রুমে ঢুকলাম। সিসিটিভি রুম।
ফুটেজ'গুলো দেখা শুরু করলাম। আমার নজর শুরুতেই একটা জিনিসে আটকে গেলো।
সন্ধ্যায় যখন মায়া হক তার মেয়ে সামিয়াকে নিয়ে হসপিটালে আসেন, তখন উনার গলায় একটা চেইন ছিলো। হাতে চুড়ি ছিলো। সম্ভবত সোনার। কিন্তু যখন আমরা মায়া হকের লাশ পাই তখন উনার গলা এবং হাত খালি ছিলো। চেইন, চুড়ি, কিছুই ছিলোনা।
তাহলে এগুলো গেলো কোথায়?
খুন কি তাহলে এগুলোর জন্য হয়েছে?
.
চিন্তিত চেহারা নিয়ে ফুটেজ দেখতে থাকলাম।
রাত ৯টায় আরিফ সাহেব আসলেন।
কিছু সময় পর আবার কেভিন থেকে বের হয়ে গেলেন।
.
রাত ১০টায় রাজু কেভিন থেকে বের হলো। তার মায়ের সাথে চিল্লাচিল্লি করে। রাজু কেভিনে ফিরে আসলো রাত ১২টায়।
.
কিন্তু মায়া হকের কেভিনে রাজু বের হওয়ার পর রাত সাড়ে ১০টায় এবং সাড়ে ১১টায় আরো দুইজন মানুষ আসলেন। উনারা কারা?
.
আমি ফুটেজ দেখতে থাকলাম।
হুট করেই রাত সাড়ে ১২টায় সবগুলো ক্যামেরা অফ হয়ে গেলো।
কি অদ্ভুত। কি আশ্চর্য।
ডাক্তার শামীমকে বললাম,
– এটা কি হলো? হুট করে সবগুলো সিসিটিভি অফ হলো কিভাবে"?
ডাক্তার শামীম আমতা আমতা করে বললেন,
– না মানে স্যার, আসলে ক্যামেরা'গুলোতে কিছু একটা প্রবলেম হয়েছিলো হয়তো। রাত অনেক হওয়ায় আমরা তখন আর কিছু করতে পারিনি।
আজকে সকালেই এগুলো ঠিক করিয়ে নেই"।
–আপনার কাছে বিষয়টা অবাক লাগছেনা? মানে যেই রাতে খুন হলো ওইরাতেই সিসি ক্যামেরা নষ্ট হয়ে গেলো"?
.
ডাক্তার শামীম আমার কথার কোনো উত্তর দিলেন না। মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইলেন। আমার মাথায় তখন ৩টা প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে।
এক, মায়া হকের অলংকার গুলো কোথায়"?
দুই, রাজু কেভিন থেকে বের হওয়ার পর যে দুইজন মানুষ মায়া হকের কেভিনে ঢুকলো তারা কারা"?
তিন, সিসিটিভি হুট করেই অফ হয়ে যাওয়ার কারণ কি"?
প্রশ্নগুলো মাথায় ঘুরঘুর করছে ঠিক এমন সময় আমার মোবাইলের রিংটা বেঁজে উঠলো। আমার স্ত্রী মিহির কল।
কলটা ধরার সাথে সাথে মিহি চিল্লায়া উঠলো-
–মেহরাব কি প্রয়োজন ছিলো আমাকে বিয়ে করার? তোমার কাজের সাথেই বিয়ে করে সংসার করতে। সারাবছর তো কাজ নিয়ে বিজি থাকো, অন্তত আজকে আরশিতার জন্মদিনে ফ্রি থাকা যেতোনা? তুমি থাকো তোমার কাজ নিয়ে। আর কখনো বাসায় আসবেনা বলে দিলাম"।
–মিহি শুনোওও, মিহি~~
মিহি রাগ করে ফোনটা কেটে দিলো। আসলে আমার ই দোষ। থানা আর হসপিটাল দৌড়াদৌড়ি করতে করতে ভুলেই গিয়েছিলাম আজকে আমার একমাত্র মেয়ে আরশিতার জন্মদিন।
ডাক্তার শামীমকে বললাম,
–সিসিটিভি ফুটেজ দেখে এখন অনেকগুলো প্রশ্ন বের হলো। যেই প্রশ্নগুলো স্পষ্ট বলে দিচ্ছে রাজু খুনি না। আমি কি এই ফুটেজটা নিয়ে যেতে পারি"?
–অবশ্যই স্যার, আপনার আরো কোনো হেল্প লাগলে আমাকে বলবেন।
আমরা আপনাকে সব ধরনের হেল্প করবো"।
–জ্বী ধন্যবাদ"।
ফুটেজগুলো নিয়ে আরশিতার জন্য গিফট কিনে বাসায় চলে আসলাম।
আজকের দিনটা আমার মেয়ে আরশিতার জন্য।
.
.
পরেরদিন সকালে টেবিলে বসে নাস্তা করছি ঠিক এমন সময় আমার কাছে একটা কল আসলো। কন্সটেবল আসিফের কল। ধরলাম।
আসিফ বললো,
–মেহরাব স্যার, রিপোর্ট'গুলো মাত্রই হাতে পেলাম। খুন করার অস্ত্রে রাজুর আঙুলের ছাপ ছাড়া অন্য কারো ছাপ পাওয়া যায়নি। এবং খুন করার আগে মায়া হকের সাথে কেউ কোনো জোর করেনি এটাও নিশ্চিত। খুন করার পরেই নোংরামি করা হয়েছে।
আরেকটা ইম্পর্ট্যান্ট কথা স্যার, মায়া হকের গলা, হাত, গাল, এসব কয়েকটা জায়গায় রাজুর ছাপ পাওয়া গেছে। অন্য কারোর না"।
কন্সটেবল আসিফের কথা শুনে কিছু সময় ভ্যাবাচেকা হয়ে চুপ করে বসে রইলাম। নিঃশব্দ।
এটা কিভাবে সম্ভব?
তাহলে কি রাজুই খুনি?
কন্সটেবল আসিফকে বললাম,
–ফাইলটা আমার টেবিলে রাখো, আমি আসছি"।
.
নাস্তা শেষ করে ফুটেজগুলো নিয়ে তাড়াতাড়ি থানায় আসলাম।
রাজুকে দেখলাম দেয়ালের সাথে হেলান দিয়ে বসে আছে। সম্ভবত রাতে ঘুমায়নি। রাজুর সাথে কোনো কথা বললাম না। টেবিলে রাখা পোস্টমর্টেম এবং ফরেনসিক রিপোর্টটা নিজেই একবার চেক করলাম।
সবগুলো প্রমাণ আগে থেকেই রাজুর বিরুদ্ধে ছিলো। এখন আবার এই রিপোর্টগুলো। তাহলে কি রাজু'ই এরকম ভয়ানক'ভাবে খুন করেছে?
ভাবতে পারছিনা।
মাথায় হাত দিয়ে এসব সাত পাঁচ ভাবছি ঠিক এমন সময় আমার মোবাইলের রিংটা বেঁজে উঠলো। দেখলাম আমার বেস্টফ্রেন্ড মুন্নার কল।
সরি, ডাক্তার মুন্না। মুন্না জার্মানির একটা হসপিটালে জব করে।
মাথায় হাজারটা টেনশন নিয়ে মুন্নার কলটা ধরতে ইচ্ছা করলোনা।
রিং হতে হতে ফোনটা কেটে গেলো।
মিনিট খানেক পর আবারো মুন্নার কল।
এবার ধরলাম।
–হ্যা মুন্না বল"।
–কি ব্যাপার মেহরাব? কল ধরেই হাই হ্যালো ছাড়া এমন কন্ঠ। কিছু হইছে"?
–আরে তেমন কিছুনা। বল তুই"।
–মেহরাব আমি তোকে ছোট থেকেই চিনি। ঢং না করে বল কি হইছে"?
–আরে দোস্ত একটা ভয়ংকর কেস।
একটা মহিলার লাশের সাথে শারীরিক সম্পর্ক করা হয়েছে। সবগুলো প্রমাণ বলছে মহিলার ছেলেটাই দোষী। কিন্তু আমার কাছে সেটা মনে হচ্ছেনা। এটা নিয়েই টেনশন করছি"।
আমার কথাটা শুনে মুন্না কিছু সময় চুপ করে রইলো। খানিকক্ষণ পর তোতলাতে তোতলাতে বললো,
–কি বললি তুই"?
–বললাম একটা মহিলাকে খুন করে লাশের সাথে শারীরিক সম্পর্ক করা হয়েছে। এবং সেই অপরাধের সব প্রমাণ তার ছেলের বিরুদ্ধে। আমার কথা শুনতে পাচ্ছিস না"?
মুন্না আবারো চুপচাপ। নিঃশব্দ।
ওপাশ থেকে আমি কোনো আওয়াজ পাচ্ছিনা। এবার খানিকটা বিরক্ত হয়ে বললাম,
–কথা বলতে না পারলে ফোন রাখ"।
মুন্না ভয়ার্ত কন্ঠে ছোট করে বললো,
– নেক্রোফিলিয়া"।
– পাগলের মতো কি'সব ভাষা ইউজ করছিস? নেক্রোফিলিয়া কি"?
– এটা একটা মানসিক রোগ মেহরাব।
এই টাইপের ভয়ংকর মানুষগুলো লাশের সাথে শারীরিক সম্পর্ক করে।
শুধু তাইনা, যাদের সাথে শারীরিক সম্পর্ক করে তাদের শরীর থেকে কিছু একটা নিয়ে নিজের কাছে স্মৃতি হিসাবে রেখে দেয়"।
মুন্নার কথাটা শুনে বুকটা ধড়ফড় করতে শুরু করলো। লাশের সাথে শারীরিক সম্পর্ক? এই ধরনের ও মানসিক রোগ হয়? কাঁপা কন্ঠে বললাম,
– শরীর থেকে কিছু একটা নিয়ে নিজের কাছে রেখে দেয় এটার মানে কি"?
– মানে শরীরের যেকোনো অঙ্গ। হতে পারে হাত অথবা হাতের আঙুল, কান, পা, এসব কিছুই। আবার এটাও হতে পারে লাশের পড়নের কাপড়, হাতের চুড়ি, আংটি, চেইন"।
মুন্নার কথাগুলো শুনে আমার সব প্রশ্নের উত্তর যেনো খোলাসা হওয়া শুরু করলো। মায়া হকের শরীরে চুড়ি এবং চেইন থাকলেও সেটা আমরা পাইনি।
ভাবছিলাম হয়তো কেউ চুরি করেছে।
কিন্তু এখন আমার কাছে সব পরিষ্কার।
আমি বললাম,
–থ্যাংক ইউ দোস্ত। এখন তুই ফোনটা রাখ, আমি তোকে পরে কল দিচ্ছি"।
–ওকে"।
.
.
মুন্নার সাথে কথা শেষ করে নেক্রোফিলিয়া সম্পর্কে আরেকটু ঘাটাঘাটি করলাম। যেটা দেখলাম তা দেখে আমার হৃদপিণ্ডের কম্পনটা আরো বেড়ে গেলো।
'নেক্রোফিলিয়া', যেটাকে বলা হয় পৃথিবীর সবচাইতে ভয়ংনর মানসিক রোগ। পৃথিবীর সবচাইতে কুখ্যাত সিরিয়াল কিলার কে জানেন?
আমেরিকার "টম বান্ডি"।
যে কি'না এই নেক্রোফিলিয়া'তেই আক্রান্ত ছিলো। শুধুমাত্র তার নিজের বয়ান অনুযায়ী ৩০জন মানুষকে সে খুন করে শারীরিক সম্পর্ক করেছে।
কিন্তু আসল সংখ্যাটা আরো অনেক বেশি।
আমার বুকটা ধুক ধুক করছে।
বাংলাদেশে এমন পৈশাচিক রোগ?
বাংলাদেশে এমন সিরিয়াল কিলার?
কে?
আরিফ সাহেব?
না'কি ওই দুইজন মানুষের মধ্যে কেউ, যারা দেখা করতে এসেছিলো মায়া হকের সাথে।
না'কি রাজু নিজেই"?
উত্তরটা আমাকে জানতেই হবে।
~ মেহরাব নয়ন
মেহরাব নয়নের রহস্য গল্প -" ইন্দ্রিয় লালসা-২"
Reviewed by সার্থান্বেষী
on
জুন ২৯, ২০২০
Rating:
কোন মন্তব্য নেই: