একবিংশ শতাব্দীর ব্যাংকিং ব্যবস্থা
একবিংশ শতাব্দীর ব্যাংকিং ব্যবস্থা
- তাহমিদ চৌধুরী
তৃতীয় বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য বিংশ শতাব্দীর শেষ দশক ও একবিংশ শতাব্দীর শুরুর দশককে সুবর্ণ সময় বলা যায়। যে সময়টাতে দেশগুলো অর্থনৈতিক সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে অভাবনীয় সাফল্য দেখিয়েছে। অর্থনৈতিকভাবে মুক্তিলাভের জন্য একটি দেশের ব্যাংকিং খাত অনেকাংশে নির্ভর যোগ্য।
বাংলাদেশের অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য এই দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক , সরকারি বেসরকারি ব্যাংক অসামান্য অবদান রেখে যাচ্ছে।দেশের কৃষি শিল্প ব্যবসা-বাণিজ্য ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প সহ সকল অর্থনৈতিক খাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকসহ অন্যান্য ব্যাংকের অবদান অনস্বীকার্য। প্রত্যন্ত অঞ্চলে ব্যাংকিং সুবিধা পৌঁছানো যাচ্ছে দেশের সরকারও ব্যাংকিং খাতের নীতিনির্ধারকদের সদিচ্ছার কারণেই।
কৃষিতে দেশের বেহাল অবস্থা থেকে আজ আমরা স্বয়ংসম্পূর্ণ । কৃষকরা 10 টাকায় ব্যাংক হিসাব খোলার সুযোগ পাচ্ছে , সঠিক খাত দেখিয়ে সরকার থেকে ভর্তুকিতে ঋণ পাচ্ছে। গ্রামের মানুষের সঞ্চয় প্রবণতা অনেকাংশে বেড়েছে । শিল্পক্ষেত্রের ঋণের সুবিধা সহ আমদানি-রপ্তানিতে দেশের ব্যাংকিং খাত অবিরাম সেবা দিয়ে যাচ্ছে। ডিজিটালাইজেশনের এই যুগে গ্রাহক সেবার মান বেড়েছে বহুগুণে । গ্রাহকরা এখন ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকে টাকা উত্তোলন ও জমা রাখতে হয় না, হাতের কাছেই আছে এটিএম সেবা।
ব্যাংকিং খাত যে শুধু ব্যবসা করা যাচ্ছে তা নয়, শিক্ষাক্ষেত্রে কোটি কোটি টাকার শিক্ষাবৃত্তি দিচ্ছে বিভিন্ন বেসরকারি ব্যাংক, দারিদ্রতা দূরীকরণে ব্যাংকের অবদান, শহরের পাশাপাশি গ্রামে প্রচুর পরিমাণে শাখা স্থাপন করা হচ্ছে যাতে করে গ্রামের মানুষের দোরগোড়ায় ব্যাংকিং সুবিধা থাকে। অনেকগুলো ব্যাংক মোবাইল ব্যাংকিং সুবিধা চালু করেছে যাতে করে মানুষ ঘরে বসে ব্যাংকিং সেবা পাচ্ছে। বিশ্বায়নের এই যুগে ঘরে বসে বিভিন্ন দেশীয় ও আন্তর্জাতিক কার্ড ব্যবহারের সুযোগ পাওয়া যাচ্ছে।
এসবের পাশাপাশি ব্যাংকিং খাতে একবিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে যেভাবে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে তা আর কোন একক খাত এককভাবে করতে পারেনি। একটি উন্নয়নশীল দেশে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করতে পারে অবশ্যই বড় ব্যাপার।
তবে সবকিছু ছাপিয়ে ব্যাংকিং খাত এখন কিছুটা চাপের মুখে আছে। সরকারের কিছু অদূরদর্শী নীতি' ব্যাংকিং খাতের জন্য কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। ব্যাংক বিগত বছর ধরে চলমান ৮ শতাংশ থেকে ১২ শতাংশ হার সুদে ৩ বছর থেকে ১৫ বছর মেয়াদি বিভিন্ন সঞ্চয় প্রকল্প যেমন দেড়গুণ বেনিফিট, ডাবল বেনিফিট, ত্রিপল বেনিফিট, মিলিনিয়র প্লাস, কোটিপতি প্লাস ইত্যাদি নানা প্রলুব্ধকারী স্কিমের সুদের হার এখনও কমাতে পারছেনা। সেখানে ৯ শতাংশ হার সুদে ঋণ বিনিয়োগ গোটা ব্যাংক খাতকে অস্বস্তিতে ফেলে দেয়া হয়েছে। অনেক ব্যাংকের মাসিক গড় আয় কমে গেছে। অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স, বাংলাদেশ (এবিবি) আশঙ্কা করছে যে, প্রতিটি ব্যাংকের বাৎসরিক আয় গড়ে ১৫০ কোটি টাকার মত করে কমে যাবে”। এ হিসাবে দেশের এ বছরে পুরো ব্যাংক খাতের আয় প্রায় ৯ হাজার কোটি টাকার মতো কমে যাবে।
ব্যাংক একটি দেশের অর্থনৈতিক উপকরণসমুহকে সমন্বিত করে, আর্থিক সহায়তা দিয়ে, পরিচর্যা করে, উপদেশ দিয়ে, বুদ্ধি পরামর্শ দিয়ে উদ্যোক্তার ভবিষ্যত স্বপ্নের কাঠামোগত উন্নয়ন সাধন করে। আবার বৈদেশিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে মূল্য পরিশোধের নিশ্চয়তা কিংবা অভয় দিয়ে আন্তর্জাতিক বাজারে পরিচিতি দান করে। দেশের ব্যবসা খাতসমূহকে সমৃদ্ধ করে। বলা চলে দেশের শিল্প ব্যবসায় খাত আর দেশের ব্যাংক খাত ওতপ্রোতভাবে জড়িত।
একবিংশ শতাব্দীর ব্যাংকিং ব্যবস্থা
Reviewed by সার্থান্বেষী
on
জুন ২৯, ২০২০
Rating:
Reviewed by সার্থান্বেষী
on
জুন ২৯, ২০২০
Rating:

কোন মন্তব্য নেই: