বহু প্রতীক্ষিত বেদনার সুর-


প্রতিদিনের মতো আজও ঘুম থেকে উঠলাম বিশ্ববিদ্যালয় যাবো বলে কিন্তু আজকের দিনটা অন্য দিনের থেকে একটু ভিন্ন। কিছুটা পার্থক্য রয়েছে- প্রতিদিন যাই ক্লাস করতে কিন্তু আজ যাচ্ছি ক্লাস কে বিদায় জানাতে। 

আজকে যদিও বা একটি স্মরণীয় দিন হতে যাচ্ছে জীবনের যেখানে ভালো-খারাপ অনেক কিছুকে হয়তো মনে পড়বে। জীবনে ৪ টা বছর কাটালাম একটা পরিবারের সাথে যেখানে একেক জন একেক জায়গায়, একেক জনের মন মানসিকতা একেক রকম তবুও তো আমরা একটা পরিবার।

পরিবারে বাবা মা ভাই বোন সবাই থাকে অনেকটা তেমনই- এখানে কিছু মানুষ আছে যারা আমাদের বাবা মায়ের মতই কখনো আমাদের সাথে হাসে, কখনও বা অনেক বকা দেয়, ভুল শুধরানোর সময় দেয়, অনেক কিছু শেখায়। এই শিক্ষাটা পাঠ্যপুস্তকে হয় এবং সমাজ জীবনে কিভাবে চলতে হবে সেটার ও শিক্ষা দেওয়া হয়। সেটা আর কেউ নয় আমাদের শ্রদ্ধেয় শিক্ষক-শিক্ষিকারাই আমাদের শিখিয়ে থাকেন ।

আর আমরা যাদের সাথে ঝগড়া করি, সুখে দুখের কথা বলি, তারা আর কেউ নয় আমাদের সহপাঠী। আচ্ছা! যাই হোক -যথারীতি এই দিনটার জন্য সবাই অপেক্ষা করে চারটা বছর পার হবে কখন, কখন সার্টিফিকেট হাতে পাবো, কখন বলবো আজ আমার অনার্স শেষ।

 সকাল বেলা যখন বিশ্ববিদ্যালয় উদ্দেশে রওনা হলাম কিছুটা ব্যতিক্রম ই অনুভব হল- কেনো যেনো ভালো লাগছিলো না মনটা। একটু ভারাক্রান্ত ছিল। যথারীতি বিশ্ববিদ্যালয় পৌছালাম- শুরু হলো অনুষ্ঠান নিজেদের প্রোগ্রাম নিজেরাই সাজাবো আনন্দ। আহা! কি আনন্দ ইনভিটেশন কার্ড দেয়া হলো শিক্ষকদেরকে, আশা ছিল সবাই আসবেন যদিও বা কর্মব্যস্ততায় অনেকে আসতে পারেন নি কিন্তু যারা ছিলেন তারা সকলেই খুব কাছের। একজন মানুষের কথা না বললেই হয় না শ্রদ্ধেয় শিক্ষিকা- ফৌজিয়া ফাতেমা।

উনি পড়াতেন ঠিকই কিন্তু ছিলেন আমাদের খুব কাছে- যার কাছ থেকে জীবন কি, আত্মবিশ্বাস কি, এক প্রকার বলতে গেলে ছোট বাচ্চা যেভাবে হাঁটা শেখে বাবা-মায়ের হাত ধরে, উনি তাই শিখিয়েছেন

 আর একজন- সুমনা ম্যাম। উনি সর্বদা শিখিয়েছেন আদর্শ নীতি বলতে কিছু থাকে। নিজেকে গড়ে তোলার জন্য রাস্তা নিজেকে করতে হয় -আত্মবিশ্বাস নিজের প্রতি ও সৃষ্টিকর্তার প্রতি। যদিও বা অনেক বকা খেয়েছি ওনার কাছ থেকে। আর সদা হাস্যোজ্জ্বল আমাদের ফরিবা ম্যাম এক প্রকার বন্ধুই বলা চলে।

 যাই হোক এবার আসি বন্ধুদের কথায় -অনেকের সময় অনেক ঝগড়া- বিবাদ দুঃখ -কষ্ট, আঘাত না জানি কয়েকজন কয়েকজনের মনে দিয়েছ। কিন্তু ওই দিন কেউ কারো মনে আঘাত দুঃখ-বেদনা কিছু নিয়ে ছিল না, মনে হচ্ছিল যেন আমরা একটি পরিবার একসাথে ছিলাম আছি। আলাদা হবো না সবাই মিষ্টিমুখ করলাম আমাদের এই আদর্শ শিক্ষক শিক্ষিকাদের সাথে ভালো সময় কাটানো -কিন্তু যখন আমরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের হচ্ছিলাম তখন কেন যেন মনে হচ্ছিল যেনো কোন কিছু হারিয়ে ফেলছি, না যেন কোন কিছু ছুটে যাচ্ছে। বারবার মনে পড়ছিল কিছু তো আছে যা মনের ভিতর দুঃখ বেদনাকে নাড়া দিচ্ছে।

বিশ্ববিদ্যালয় ক্যম্পাসে আনুষ্ঠানিকতা সেড়ে যথারীতি রেস্টুরেন্টে পৌছালাম সবাই মিলে। কে কার সম্বন্ধে কি মন্তব্য করব,তার জন্য শার্ট নিয়ে শুরু হয়ে গেল লেখালেখি। অনেকে অনেক লিখা লিখছে, কথায় বলে না বন্ধুত্ব মানে হচ্ছে- যে তোমাকে পচাবে যে কোনো জায়গায় -কিছু অদ্ভুত কথা দিয়ে। যথারীতি তাদের লেখাগুলো সেরকম ছিল। কেউ কাউকে পচাতে এক বিন্দু জায়গা বাকি রাখেনি, তা ছিল শার্টের লেখা প্রতিটা অক্ষরে তাদের ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ ।সবশেষ খাওয়া দাওয়া- তারপর শুরু হবে রং মাখামাখি, যতই বললাম না, রং মাখবো না -তাও বাঁচা গেল না। এমন কি গাছের ঝোপে লুকিয়ে ছিলাম রং লাগাবো না কিন্তু পারলাম কই? এভাবেই কেটে গেল--

এবার সময় হল ঘরে ফেরার। অনেকটা মনে হচ্ছিল একটা মেয়েকে যখন বিয়ে দেওয়া হয় ,বাবা মা তাকে অন্যের হাতে তুলে দেয় বা বলা চলে একটা নতুন জীবন শুরু হয় ।অনেকটা সেরকমই মনে হচ্ছিল ,এই অভিভাবক রা আমাদের এতদিন সাহায্য করেছেন জ্ঞানার্জনের জন্য। আজ হয়তো তাদের ফেলে নতুন একটা জীবন ,নতুন একটা অধ্যায় শুরু করার জন্য আমরা দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে ছিলাম ।খারাপ লাগছিল আবার কবে সবার সাথে এক হয়ে কোথাও যাব ,সবাই একসাথে খাব, মজা করবো। আদৌ কি হবে সেরকম আর ? নাকি শুধু স্বপ্নই থেকে যাবে। বাস্তবতা বলে -এই দিনগুলো আর কখনো ফিরে আসবে না । হয়তো সে কারণেই বলে সব বিদায় মধুর হয় না ,কিছু বিদায় দুঃখের হয় ।যে বিদায় কে আমরা ধরে রাখতে পারি না অনেকটা সময় এর মত।

সেদিন মনে হচ্ছিল -এই দিনটা আরো পরে আসতো আরও কিছুদিন থেকে যেতাম। কিন্তু সময় তো! সময়ের কাটা চলবে সেটা কখনোই কারো জন্য থামবে না ।বিদায় টা অনেকটা সে রকমই ছিল ।

সুখের অনেক অর্জনের মাঝেও ছিল বেদনা, কষ্ট হচ্ছিল কিন্তু কিছু করার ছিল না ।এক পর্যায়ে মনে হলো এটা আসলেই স্মরণীয় দিন, ঠিকই একপ্রকার অনাকাঙ্খিত দিন।পরিবার থেকে আলাদা হওয়ার কষ্ট, আপন মানুষ গুলো থেকে দূরে যাওয়ার কষ্ট -আর এভাবে শেষ হলো এই বহুল প্রতীক্ষিত দিনটি।

খাইরুন নাহার
১৮/০৯/১৮
চট্টগ্রাম
বহু প্রতীক্ষিত বেদনার সুর- বহু প্রতীক্ষিত বেদনার সুর- Reviewed by সার্থান্বেষী on সেপ্টেম্বর ২১, ২০১৮ Rating: 5

কোন মন্তব্য নেই:

Copyright 2020, All Rights Reserved by Blog Sarthanweshi

Blogger দ্বারা পরিচালিত.