কোভিড- 19 মোকাবেলায় বাংলাদেশ ব্যাংকের ভূমিকা
যে কোন দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ওই দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের পরিচালকের ভূমিকা পালন করে থাকে। স্বাধীন বাংলাদেশের আর্থিক কাঠামো সর্বোচ্চ প্রতিষ্ঠান হলো দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক যার নাম বাংলাদেশ ব্যাংক। ১৯৭২ সালে প্রতিষ্ঠিত দেশের আর্থিক খাতের এই অভিভাবক অত্যন্ত সফলতার সাথে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে সরকারের প্রধান আর্থিক পরামর্শক হিসেবে কাজ করে যাচ্ছে।
2019 সালের একেবারে শেষের দিনগুলোতে নতুন আরেকটি বছরকে বরণ করে নেয়ার প্রস্তুতি প্রায় চূড়ান্ত করে ফেলেছিল ঠিক তখনই প্রাণঘাতী ভাইরাসের কবলে পড়ে গোটা বিশ্ব । যার শুরুটা হয়েছিল চীনের হুবেই প্রদেশের রাজধানী উহান শহরে । অল্প কয়েকদিনের মধ্যেই বিশ্বায়নের সুযোগ নিয়ে চীনের মহামারী থেকে বৈশ্বিক মহামারিতে রূপ নিলেও করোনা ভাইরাস। নতুন সার্স গোত্রীয় এই ভাইরাসের নতুনত্ব হলো মানুষের সংস্পর্শে তা অপর মানুষের মধ্যে ছড়ায়। তাই আক্রান্ত দেশগুলোর জনগণ স্বাভাবিক কর্মকান্ড ছেড়ে ঘরবন্দি হতে বাধ্য হলো। যাকে বিশেষজ্ঞরা লকডাউন নামে আখ্যায়িত করেছেন। তারপর থেকেই সারা বিশ্বের সর্বোচ্চ ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোতে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডসহ সকল সামাজিক কর্মকন্ড সীমিত করতে বাধ্য হয়েছে। যার ফলে একটি অর্থনৈতিক বিশৃঙ্খলা পরিলক্ষিত হচ্ছে বিশ্বের সর্বত্র।
গত ৮ মার্চ 2020, বাংলাদেশেও হানা দেয় এই ভাইরাস। গোটা জাতি যখন স্বাধীনতার প্রাণভ্রমর জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন এর প্রস্তুতি ইতোমধ্যে সম্পন্ন করেছিল ঠিক আগ মুহূর্তে হানা দেয় প্রাণঘাতী এই করোনাভাইরাস। ভাইরাসের প্রকোপের তীব্রতা দেখে সরকার মুজিব বর্ষের সকল আয়োজন বাতিল করে। সাধারণ ছুটি ঘোষণা করতে বাধ্য হয়।
করোনা দূর্যোগে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয় দেশের আর্থিক খাত। বিশেষ করে বেসরকারি খাত যেমন তৈরি পোশাক,নিট ওয়ার শিল্পসহ বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠান। দিশেহারা হয়ে পড়ে এইসব প্রতিষ্ঠানের সাথে সংশ্লিষ্ট মানুষগুলো। শ্রমিকরা পড়ে যায় তীব্র আর্থিক সংকটে।অনেক শিল্প প্রতিষ্ঠানের আর্থিক সঙ্কটের মুখে পতিত হয়। এরই প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ৫ ই এপ্রিল২০২০,৭২ হাজার ৭৫০ কোটি টাকা আর্থিক প্রণোদনা ঘোষণা করেন।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ঘোষিত আর্থিক প্রণোদনা বাস্তবায়নের গুরুভার এসে পড়ে দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংকের উপর।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা মেনে বাংলাদেশ ব্যাংক যে কাজগুলো করেছিল তার একটি সংক্ষিপ্ত তালিকা তুলে ধরছি-
১) স্বল্প সুদে শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো কে ঋণ প্রদান করা।
২) প্রান্তিক নিম্ন আয়ের মানুষদের সরাসরি আর্থিক সহায়তা করার জন্য সরকারের পদক্ষেপ বাস্তবায়নে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে নগদ অর্থ প্রেরণ।
৩) সরকারি প্রণোদনায় ব্যয়িত অর্থের যোগান নিশ্চিত করন।
৪) কৃষকদের আর্থিক সহায়তার জন্য সহজ শর্তে কৃষি ঋণ প্রণয়নে কৃষি ব্যাংক সহ সকল ব্যাংকে নির্দেশনা প্রদান করা।
৫) প্রবাসী নাগরিকদের রেমিটেন্স প্রণোদনা দেয়ার জন্য ব্যাংকগুলোকে সার্বিক গাইডলাইন প্রদান করা।
সবচেয়ে বড় ব্যাপারটি হলো বাংলাদেশ ব্যাংক এই দুর্যোগ কাটাতে দুর্যোগের মধ্যেও ঝুঁকি নিয়ে মানুষকে ব্যাংকিং সেবা দিয়ে যাচ্ছে। দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে নিরলস কাজ করে যাচ্ছে দেশের এই সর্বোচ্চ ব্যাংকের সাথে সংশ্লিষ্ট প্রতিটি কর্মী। এই সেবা নিরবিচ্ছিন্ন করার জন্য সম্প্রতি আইন সংশোধন করে সরকার বাংলাদেশ ব্যাংকের মাননীয় গভর্নর জনাব ফজলে কবিরের মেয়াদ আরও দুই বছর বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই থেকেই বুঝা যায় কোন ভাইরাস মোকাবেলায় বাংলাদেশ ব্যাংক কতটা সক্রিয় ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে।
-এম এইচ হাসনাত
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
কোভিড- 19 মোকাবেলায় বাংলাদেশ ব্যাংকের ভূমিকা
Reviewed by সার্থান্বেষী
on
জুন ২৭, ২০২০
Rating:
কোন মন্তব্য নেই: