সিস্টার সিটি ও বাংলাদেশের অর্থনীতি



নিজেদের পারস্পরিক সাংস্কৃতিক ও বাণিজ্যিক বন্ধন আরো দৃঢ় করার লক্ষ্যে দূরবর্তী দুটি শহর বা দেশের মধ্যে একপ্রকার সামাজিক চুক্তির মাধ্যমে এক দেশ বা শহর অন্য দেশ বা শহরকে নিজেদের আদলে গড়ে তোলার প্রক্রিয়াকেই সিস্টার সিটি বা টুইন সিটি বলা হয়।ব্রিটিশ শাসিত অঞ্চল বা দক্ষিণ এশিয়ায় এই পদ্ধতিকে সিস্টার সিটি বলা হলেও আমেরিকায় একে টুইন সিটি এবং চীনে ফ্রেন্ডশিপ সিটি নামে পরিচিত। ১৯৪৭ সালের দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তী সময়ে মিত্রদেশগুলোর ভিতর পারস্পরিক বন্ধুত্ব বৃদ্ধি এবং আগেকার শত্রু দেশগুলোর মধ্যে সম্পর্ক স্থাপনের উদ্দেশ্যে সিস্টার সিটি বা ফ্রেন্ডশিপ সিটি এই ধারণাটি জনপ্রিয় হতে শুরু করে। ২০০০ সালের পর থেকে এই ধারণাটি আরো বেশি জনপ্রিয় হতে শুরু করে।

করোনার ছোবল থেকে যখন বিশ্বের প্রতিটি দেশ বিপর্যস্ত ঠিক তখনই ১৯ মে ২০২০ বেইজিং থেকে  বাংলাদেশকে দ্বিপাক্ষিক প্রস্তাব করা হয় বাংলাদেশ ও চীনের পররাষ্ট্রবিষয়ক কর্মকর্তাদের এক ভার্চুয়াল মিটিং ওয়েবিনারে। চুক্তির ব্যাপারে আগ্রহ দেখাচ্ছেন সরকারদলীয় আন্তর্জাতিক পররাষ্ট্রবিষয়ক নেতৃবৃন্দ।চুক্তি অনুযায়ী চীন তাদের দেশের উন্নত কয়েকটি শহরের আদলে বাংলাদেশের রাজধানীর একাংশ তথা ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন সহ মোট ছয়টি শহরকে তারা নতুনরূপে সাজানোর প্রস্তাব করে।

চীনের ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টি অফ চায়না- সিপিসি ও বাংলাদেশে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মধ্যকার অনলাইন আলোচনায় বাংলাদেশকে লোভনীয় প্রস্তাব করার পাশাপাশি অন্যান্য মহামারীতে বাংলাদেশকে সরাসরি সহযোগিতার আশ্বাস দেয় যদিও বাংলাদেশের পক্ষ থেকে এখনো পর্যন্ত কোন রেজাল্ট জানানো হয়নি তবে তাদের একটি শর্ত পূরণ করে চীন ইতিবাচক ইঙ্গিত দিচ্ছে।

গত ১০ জুন বাংলাদেশ সফরে আসে চীনের ২০ সদস্যের একটি মেডিকেল টিম যারা বাংলাদেশের বিভিন্ন হাসপাতালে আগামী ২৫ তারিখ পর্যন্ত পর্যবেক্ষণ করে বিভিন্ন পরামর্শ প্রদান করবেন বলে জানা গেছে।

আপাতদৃষ্টে সিস্টার নীতি বাংলাদেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে অনুকূলে মনে হলেও অনেক বিশেষজ্ঞ শ্রীলংকা নেপাল মালদ্বীপ এর কথা মনে করিয়ে দিচ্ছেন বারবার। অন্যদিকে বাংলাদেশের আজন্ম মিত্র দেশ ভারত কি এই চুক্তি বাস্তবায়ন ভালো চোখে দেখবে সে ষ জিজ্ঞাসা এখন কূটনৈতিক পাড়ায়।

ভারত ও চীনের মধ্যে গালওয়ান উপত্যকায় দু'পক্ষের অসন্তোষ দিন দিন বাড়তে থাকায় বিশ্বব্যাপী যখন আলোচনা হচ্ছে কে কার পক্ষে যাবে- চীন তখন আবারও বাংলাদেশের সামনে উদারতা দেখাতে চীনের বাজারে বাংলাদেশের পাঁচ হাজারেরও বেশি পণ্যের শুল্কমুক্ত অনুপ্রবেশ এর সুবিধা দেয়। এ সুবিধা বাংলাদেশের জন্য নিঃসন্দেহে এক অনাকাঙ্খিত পাওয়া হলেও ভারত তাতে মোটেও খুশি নন। ভারতের কূটনৈতিক পাড়ায় এখন শুধু হাহাকার- টিভি আলোচনা বারবার বলতে চাচ্ছেন বাংলাদেশের প্রতি চীনের এমন উদারতা ভারতকে চারদিক থেকে ঘিরে ফেলার মাস্টারপ্ল্যান ছাড়া আর কিছুই না

সিস্টার নীতির প্রস্তাব ও গত দুই মাসে চীনের উদারতায় বাংলাদেশের কূটনৈতিক পাড়ায় আশার আলো দেখছেন এই বলে যে বাংলাদেশ-চীনের প্রস্তাবে সাড়া না দিলেও ভারতকে চাপ সৃষ্টি করে যুদ্ধ পরবর্তী সময়কাল থেকে অমীমাংসিত বিষয়গুলো মীমাংসার জন্য চাপ দিতে পারবে। যদিও বর্তমানে দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতের একমাত্র মিত্র এবং সবচেয়ে কাছের দেশ বাংলাদেশ যদি তাদের হাতছাড়া হয়ে যায় তাহলে ভারতকে চারদিক থেকে ঘিরে ফেলার জন্য চীনের আর কোনো বাধা থাকবে না এবং তারা তাদের সিল্ক রোড এর পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে পারবে অনায়াসেই। অন্যদিকে এর চুক্তি স্বাক্ষরিত হলে বাংলাদেশের হয়ে যে কোন যুদ্ধে বাংলাদেশের শত্রুর বিরুদ্ধে সরাসরি অংশ নিতে পারবে চীন।

প্রস্তাবিত এ সিস্টার্স সিটি বাস্তবায়নে চীনের খরচ হবে ১৫ থেকে ২০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার কিন্তু বাংলাদেশ সরকার এখনো পর্যন্ত চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত পৌঁছায়নি।তবে আশা করা যাচ্ছে অতি শীঘ্রই এই চুক্তি বাস্তবায়িত হবে তবে বাংলাদেশ সরকার দরকষাকষি করছে এজন্য যে বাংলাদেশে অবকাঠামোগত উন্নয়ন হলে দেশের মানুষের কোন উন্নয়ন হবে না।তাই সরকারের একটি উচ্চ মহল বলছে যদি এই চুক্তি বাস্তবায়িত হতে হয় তবে বর্তমানে বাংলাদেশে অগ্রসরমান ১০০ টি অর্থনৈতিক অঞ্চলে চীন সরকারের সরাসরি বিনিয়োগ করতে হবে যার ফলে দেশের জনগণ সেখানে কাজ করে নিজেদের অর্থনৈতিক উন্নয়ন করতে পারবে।
সিস্টার সিটি ও বাংলাদেশের অর্থনীতি সিস্টার সিটি ও বাংলাদেশের অর্থনীতি Reviewed by সার্থান্বেষী on জুন ২০, ২০২০ Rating: 5

Post Comments

Copyright 2020, All Rights Reserved by Blog Sarthanweshi

Blogger দ্বারা পরিচালিত.