ভাই পুলিশ আইছে!!




আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রাম(আইআইইউসি) এর অধ্যায়নরত ছাত্রদের সাত নাম্বার ছাত্রাবাস এটি। চট্টগ্রাম শহরের প্রাণকেন্দ্রে একটি অভিজাত আবাসিক এলাকার ৪ নম্বর রুটের 77 নম্বর বাসায় এর অবস্থান। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা তাদের নিত্যকর্ম গবেষণা ,আড্ডা অন্যান্য সকল কর্ম সেরে ঘুমোতে ঘুমোতে একটু দেরী হয়ে যায়। সেদিন ছিল ২১ শে মার্চ ২০১৫ বরাবরের মতোই হলের ২০ থেকে ৩০ শতাংশ ছাত্র জেগে ছিল বাকি সবাই ঘুমিয়ে প ছিল ভোর তিনটে ৫৬ মিনিট-চাঁদনী রাত; এমন একটি সুন্দর রাতে আল্লাহর কাছে এক আত্মসমর্র আধারে তার প্রভুকে প্রাণভরে ডাকবে বলে প্রার্থনা ঘরে যাচ্ছে। এমন সময়ে সে লক্ষ্য করলো ভব কারুকার্যমন্ডিত ফাক দিয়ে দেখা যাচ্ছে গুটিকয়েক' লোক দাঁড়িয়ে কথা বলছে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে। তারা কি কি বিষয় নিয়ে কথা বলছে তা আর সে আত্মসমর্পণকারীর ক আন্দাজ করলো হয়তো তারা রাতের আঁধারে আর দশটি ছেলের মতো এখানে দাঁড়িয়ে আড্ডা দিচ্ছে, বা সিকিউরিটি গার্ডের কয়েকজন মিলে হয়তো এখানে দাঁড়িয়ে কথা বলছেন- মুহূর্তের মধ্য করে দিয়ে ,ভবন এর সদর দরজায় ঠক ঠক ঠক আওয়াজ করতে লাগল সেই মানুষগুলো।  
 তখন সে আত্মসমর্পণকারী আর বুঝতে বাকি রইলো না যে এই মান অন্য সকল মানুষের মতো আড্ডাবাজ বা এরা কোন সিকিউরিটির লোক না বরং এরা সরকারী পোশাকধারী লোক- 

অল্প কিছুক্ষণ পরেই আজান হবে দিনের প্রথম আজান- ফজরের নামাযের আযান। সবাই ঘুমে মগ্ন অনেকে আবার জাগ্রত কিছুক্ষণ পরই পরীক্ষা , আবার অনেকে হয়তো ভেবে রেখেছেন নামাজটি পড়ি তার পরেই না হয় ঘুমাই। এতক্ষণে হলের পরিচালকদের সহযোগিতায় কেয়ারটেকারের ঘুম ভাঙলো এবং তার সহযোগিতায় ভবনের মূল ফটক দিয়ে প্রবেশ করলো অজ্ঞাতরা। অজ্ঞাতদের সরকারি ভুটের ঠক ঠক ঠক আওয়াজে আত্মসমর্পণকারী বুঝতে পারল যে, হ্যা! এবার উপরে চলে এসেছে। সে যখন নিশ্চিত হলো এরা অস্ত্রধারী তখন তার বুকের ভেতর কেমন একটা ধপ ধপ ধপ আওয়াজ করছে-কি আর করা যা হবার তাই হবে চিন্তা করে আর কি হবে -বিধাতা যা লিখে রেখেছেন তাই তো হবে তাই না!। বিধাতার লিখন- প্রথমেই আওয়াজ পড়লো সেই আত্মসমর্পণকারীর দরজায়, ধপাস ধপাস শব্দে কাঠের দরজা টা যেন বলে উঠল "খোলার আগে আমাকে আর মেরো না"! নির্ঘুম চোখে যখন তার চোখ টানটান করছিল সেই চোখ নিয়ে সে আত্মসমর্পণকারী তাদেরকে সুন্দরভাবে সালাম দিয়ে বলল," আসুন স্যার"। রুমে তখন তারা দুই জন ছিল এক আত্মসমর্পণকারী আর তার রুমমেট রাকিব, অল্প কিছুক্ষণ হলো রাকিব চোখ আটকেছে। পুলিশ এবার সেই আত্মসমর্পণকারী কে নাম জিজ্ঞেস করল-
-কি নাম?
-আজম ভায়।
আত্মসমর্পণকারীকে অধ্যায়নরত দেখা গেল তাই পুলিশ আর তাকে নতুন করে জিজ্ঞেস কর না সে কি করে। তার চেয়ে বরং তাকে জিজ্ঞেস করলো কোথায় পড়ালেখা করে ? উত্তরে সাবলীলভাবেই সে বলল,-" স্যার আই আই ইউ সি"। 
-বাড়ি কোথায় ?
-লক্ষ্মীপুর স্যার!
আত্মসমর্পণকারী তথ্য যাচাইয়ের পর এবার শুরু হলো তার রুমমেট রাকিবের তথ্য সংগ্রহের কাজ । পুলিশ অফিসার বলল," তাকে তুলো।" আত্মসমর্পণকারীর বহু প্রচেষ্টায়ও তার ঘুম ভাঙলো না-অতঃপর পুলিশ অফিসারের সেই চোখ রাঙানো কথায় তার ঘুম ভাঙতেই হতভম্ব হয়ে গেল রাকিব- তাকেও প্রশ্ন করল-সেই চেনা প্রশ্ন। ঠিক আছে বলে প্রস্থান করলো, এবার মিশন রুম নাম্বার ২০৮ এ। রুমের বাসিন্দা ছিলেন ব্যাচেলর লেভেলের শেষ দিকের ছাত্র- শ্রদ্ধেয় সাকিরুল আলম ভাই। দরজায় প্রথমে টোকা, ধাক্কা, তারপর লাথি-ঠপাস ঠপাস আওয়াজ করে দরজাটা যেন চিৎকার করা শুরু করে। কিন্তু রুমের ভেতর থেকে যেন কোন আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে নাঃ নির্ঘুম রাত কাটিয়ে মাত্রই ঘুমালো রুমের অধিবাসী মি আলম। বহু প্রচেষ্টার পর তার সেই কোটি টাকার ঘুম ভাঙলে উত্তেজিত পুলিশ তাকে বলে "এমন করে কেউ ঘুমায় মিয়া"। উত্তরে কি বলবে ঠিক ভেবে পাচ্ছিল না আলম সাহেব, তারপর পুলিশদের পক্ষ থেকে সেই চেনা প্রশ্ন। এরপর এক এক করে প্রথম দ্বিতীয় তৃতীয় চতুর্থ ও পঞ্চম তলায় অভিযান চালিয়ে পুলিশ ইতোমধ্যে প্রায় ১০ জনকে জিম্মি করল-

চতুর্থ তলার ৪০৯ নাম্বার রুমের দরজায় টোকা -কচি ঘুম ভাঙলো রুম বাসীদের। কে বা কারা রুমের দরজায় টোকা দিচ্ছে তা না ভেবেই রুমের অধিবাসী চিৎকার করা শুরু করল ,"ওই বেটা দরজায় কি এত রাতে এত জোরে কেউ থাপড়ায়!" দরজা খুলতেই শাওন ভাই হতবাক: পুলিশের উপস্থিতি দেখে সে কি বলবে ভেবে পাচ্ছেনা অতঃপর ঘুমে মগ্ন রুম বাসীদের জিজ্ঞেস করল: সেই চেনা প্রশ্ন! প্রশ্ন শুনে মনে হচ্ছিল এ পুলিশ অফিসাররা সেকালের ছাত্র সৃজনশীলতা বলতে তাদের ভিতরে কিছু নেই বরং তারা তাদের পড়ালেখার সৃজনশীল পদ্ধতিতে পরে আসে নাই।

২০৬ নং রুমে পুলিশকে আপ্পায়নের আহবানে পুলিশ তো হতবাক - যাকে সে গ্রেফতার করতে আসছে সে যদি তাকে চেয়ার ঠেলে দেয় তাতে তো শিশাও গলে যাওয়ার কথা। রুমের অধিবাসী সিলেট নিবাসী মাহফুজ আহমেদ অত্যন্ত বিনয়ের সহীত তাকে রোলিং চেয়ারে বসার আহবান করছিল - নিজের জন্য বানানো কফি অফার করছে। ভ্রাতৃত্ববোধের চরম মাত্রায় পৌছে পুলিশও কিছুটা মুগ্ধ। তার সেই মুগ্ধতা আরও কিছুদুর বেড়ে যায় ৪০২ নাম্বার রুমে -পিয়াস আহসানের আবদার শুনে। তাকে পুলিশ নিচে নামার জন্যে বললে সে বলে,
-চল আমাদের সাথে -
- স্যার৷ আমার একটু পর পরীক্ষা, আমি কেমনে যাব। 
এ যেন মামার বাড়ির আবদার, পরীক্ষা বলে পুলিশের আদেশ মানবে না। হু পুলিশ মামার মতই আচরন করেছে। তাদেরকে ছাড়াই সে নিচে ফিরে এল -



অল্প কয়েকটা রূম বাকি রেখেই  তারা অভিযান শেষ করল। সাথে কয়েকজন ছাত্রকে নিয়ে নিচে নেমে আসলো। গেট থেকে প্রস্থান করার ঠিক আগ মুহূর্তেই হলে এসে উপস্থিত হলেন হলের আবাসিক ছাত্রদের অভিভাবক। নির্দিষ্ট পরিমাণ মুচলেকা দিয়ে তাদেরকে ছাড়িয়ে নেয় পুলিশের হাত থেকে। ছাড়া পাওয়া ছেলেরা যেন প্রাণের সঞ্চার পেল। পুলিশ হল ত্যাগ করল সাথে ছেলেরা সবাই তাদের সাথে ঘটে যাওয়া অতীত কাহিনী টি শেয়ার করতে লাগল ।ছোট-বড় সবাই যেন একই মাপকাঠিতে এসে তাঁর অভিজ্ঞতার কথা বলতে শুরু করল। হ্যাঁ! ছোট বড় একে একাকার হয়ে যাওয়ার যে আনন্দ পাছে; সেটা শুধু এই হল জীবনেই সম্ভব।এ যে কি প্রাপ্তি সেটা যারা হলে থাকে নাই বা সামনের দিনগুলোতে থাকার ইচ্ছে পোষণ করছে না তারা কোনোভাবেই বুঝতে পারবে না। অন্যকে মানিয়ে নেওয়া অন্য আরেকটি লাইফস্টাইলের মানুষকে জানা এটা তার পরবর্তী জীবনের বড় মোড় ঘুরাতে পারে -

-স্বার্থান্বেষী পথচারী
-চান্দগাও আবাসিক,
২১ শে মার্চ, ২০১৮
ভাই পুলিশ আইছে!! ভাই পুলিশ আইছে!! Reviewed by সার্থান্বেষী on সেপ্টেম্বর ১৩, ২০১৮ Rating: 5

কোন মন্তব্য নেই:

Copyright 2020, All Rights Reserved by Blog Sarthanweshi

Blogger দ্বারা পরিচালিত.